অন্তর থেকেই যদি ‘ইউনাইটেড গ্রুপ’ বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ভালোবাসে তাহলে তাদের উচিৎ অচিরেই ঢাকায় তাদের মালিকাধীন ‘ইউনাইটেড হাসপাতাল’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘শেখ রাসেল’ বা জাতির জনকের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নামে নামকরণ করা। এ শিল্প গ্রুপ কী কারণে আকস্মিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য আবেগপ্রবণ হলো, তা রীতিমতো রহস্যজনক। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকাকালে এদের কখনোই দেখা যায়নি আওয়ামীলীগের পাশে দাঁড়াতে। বিএনপি জোট সরকারের আমলে ফুলে ফেঁপে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান কখনোই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতেও তাকে স্মরণ করেছে বলে নজির নেই। আমাদের প্রশ্ন: ইতিপূর্বে ইউনাইটেড গ্রুপ কি তাদের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারো নামে করেছিল? আমরা চট্টগ্রামবাসী এটা জানতে চাই। এই ‘ইউনাইটেড গ্রুপ’কে রেলের জায়গায় হাসপাতাল করতে দিতে যুগপৎ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। সরকারি জায়গায় হাসপাতাল হবে কি হবে না এটা সরকারের এখতিয়ার। হাসপাতাল হলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি হবে এটাও অনস্বীকার্য। সমস্যা শুধু একটা, হাসপাতাল তৈরি করতে চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত শহীদের স্মৃতি বিজড়িত নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা সিআরবি’র সবুজ প্রকৃতি কেন বেছে নেওয়া হল? চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে মূল্যবান জায়গায় এই ৬০০ শতক জমির মূল্য ৬০০ কোটি টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু কী উদ্দেশ্যে ৮ কোটি টাকায় ‘ইউনাইটেড গ্রুপ’কে এটা ৫০ বছরের জন্য লীজ দেওয়া হল এটা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তদন্ত করা উচিৎ। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার অনেক বছর আগেই পরিবেশ সংরক্ষণের তাগিদে পুরো সিআরবি এলাকাকে সরকারের পক্ষ থেকে ‘হেরিটেজ জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিডিএ একাধিকবার তাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়েছে এখানে কোনো স্থাপনা আইনসিদ্ধ নয়। কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই গায়ের জোরে হাসপাতাল তৈরীর পরিকল্পনায় কেন অনড় সরকারের রেল মন্ত্রণালয় তা রহস্যাবৃত। একজন নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকেই আমাদের এই প্রতিবাদ। কারো বিরুদ্ধে এই আন্দোলন নয়, প্রতিহিংসা বা স্বার্থের জন্য এখানে মতানৈক্য নয়। সিআরবি’র সাথে জড়িত রাষ্ট্রের স্বার্থ, প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং তার সাথে এই নিরিবিলি স্থানে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য শহীদের কবর। চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণের প্রাণের দাবি এই সবুজ ধ্বংস করে এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে না। সবচেয়ে বড় লজ্জা আমাদের আদর্শিক প্রাণপুরুষ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রিয়তমা স্ত্রী বঙ্গমাতা ফজিলতুনন্নেসা মুজিবের নাম বিক্রি করা হচ্ছে এই হাসপাতাল নির্মাণে, তাদের বিশ্বাস এই মহীয়সী নারীর নাম ব্যবহার করলে রাজনৈতিক ফায়দা এবং সমর্থন নিয়ে এই হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের দমানো যাবে। এই অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য বেনিয়া লুটেরা স্বার্থবাদী মহল সিআরবি এলাকায় রাতের আঁধারে ‘বঙ্গমাতা’র ছবি সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। দিনের আলোয় এই কাজ না করে গভীর রাতে এ ধরনের কাজ প্রকারান্তরে বঙ্গবন্ধু পরিবারকেই হেয় করার নামান্তর। পক্ষে বিপক্ষে বলার অধিকার সবার আছে আমরা চাই এই হাসপাতাল যারা সিআরবিতেই করতে চান তারা দিনের বেলায় জনসম্মুখে এসে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করুক। আমরা প্রত্যাশা করি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিলম্বে এই ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে হাসপাতাল তৈরির সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করবেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করি।
