মানুষ জন্মও নেয় একা, মৃত্যুতেও একা

শায়েলা আহমেদ | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আসলে আপন বলে কিছুই নেই এই ভুবনে। কেউ কারো আপন হয় না। আপন করে ভাবতে গেলেও জীবন থেকে সব হারিয়ে যায়! জীবনটা হয়ে যায় আনন্দ বেদনার কাব্য। সন্তানেরা যখন ছোট ছিলো সারাদিন ওদের পিছনেই ব্যস্ততার সময় কাটতো। দিনের সূর্য কখন যে পাটে নামত কখনো নজর করে দেখারও সুযোগ হতো না। নিজের দিকে খেয়াল তো নয়ই। আর আজ এই সময়ে কতো অবসর! একাকী দুপুর, সন্ধ্যে, বিকেল। আজ আমার ক্লান্ত সময়, নির্জনতার অবসর। ওরা কিন্তু ভীষণ ব্যস্ত! আজ পিছনের দিনগুলোর কথা মনে হলে চোখে পানি এসে যায়। জীবন এমনই বুঝি হয়! এক সময় যাদের নিয়ে একজন মায়ের অষ্টপ্রহর সময় কাটে ওরাই সময়ের স্রোতে বড় হয়ে যার যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে যায়। দূরে চলে যায়। আর তখন থেকেই শুরু হয় এক সময়ে ব্যস্ত থাকা সেই মায়ের অখণ্ড নিশ্চুপ সময় আর একাকী অবসর। কখনো করুণ বিষাদময় একাকীত্ব। স্মৃতির দুয়ারে ঘুরে এসে তখন দু’নয়ন ভেসে যায় অশ্রুজলে। জীবনের একটা সময়ের পর মানুষের নির্ভরতার আর আস্থার জায়গাগুলো ক্রমেই সংকীর্ণ হতে থাকে। আপন মুখগুলো দূরে চলে যায়। আর তখনই মানুষ নিজেকে বড় একা ভাবতে শুরু করে। সেই একাকী সময়ে মানুষের মন কোন একটা নির্ভরতার, ভালোবাসার বা আস্থার জায়গা খুঁজে ফিরে- অনেকটা স্রোতের শ্যাওলার মতো। যেনো অথৈ সাগরে ডুবতে ডুবতে, ভাসতে ভাসতে কোন খড়কুটো আঁকড়ে ভালো থাকার প্রয়াস পায় তার করুণ মন। এটাই যেনো বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু তার সেই প্রয়াসও কখনো কখনো তাকে সুখের তরীতে ভাসিয়ে নিতে পারে না। সেই নৌকোও ডুবে যায় বিরহী স্রোতের তোড়ে। জগত সংসারে মানুষ জন্মও নেয় একা, তেমনি মৃত্যুতেও একা। আসলে মানুষ সব সময়ই একা। জীবনে চলার পথে মাঝের কিছুটা সময় মিথ্যে কুহেলিকায় ভর করে তার জীবন কাটে। আপন হোক বা পর সবাই নিজের পথ খুঁজে নিয়ে চলে যায় দূরে! তখনই সে দেখতে পায় নির্দয় সময়ের ডানায় ভর করে সে বড় নিঃসঙ্গ! বড়ো একা!

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবুজ পরিবেশ রক্ষার জন্যই আমাদের আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধজুম্মার দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও বিশেষ ফজিলত