ইলিশ শিকার বন্ধ রাখার সময় নিয়ে প্রশ্ন

ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা ও ছোট আকারের মাছ প্রজননকাল নিয়ে গবেষণার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে ইলিশের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। দশ বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। আকৃতিতে বড় হয়েছে মাছ। কিন্তু সাগরে ডিমওয়ালা ও ছোট আকারের ইলিশ ধরা পড়ায় শিকার বন্ধ রাখার সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরো কিছুদিন সময় পেলে এসব মাছ কোটি কোটি বাচ্চার জন্ম দিত, যা দেশের মৎস্য খাতে আরো সুফল আনত। তাই প্রজননকাল নিয়ে গবেষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর এবং মাছ শিকারের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাছের প্রজনন সময়কাল নিরাপদ রাখা, মাছ বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াসহ দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকার পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। অপরদিকে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মাছ বড় করার জন্য দিনের পর দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখার কারণে লাখ লাখ জেলেকে সহায়তা করছে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। এতে করে সাগরে মাছের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মাছের আকারও। এতে করে গত ১০ বছরে দেশে ইলিশের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইলিশ সেক্টরে বিপ্লব।
মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৭১৪ টন। দশ বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন। এ বছর ইলিশের উৎপাদন ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জাটকা নিধন বন্ধ এবং মাছ বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাছ বড় হওয়ায় ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মোট উৎপাদন বাড়ছে। আগে বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ পেতে কষ্ট হত। এখন দুই কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যায়।
অবশ্য মাছ শিকারে জড়িত একাধিক ট্রলার মালিক আজাদীকে বলেন, মাছ বড় হচ্ছে, ওজনও বাড়ছে। এর সুফল মিলছে। কিন্তু মাছ শিকার বন্ধ রাখার যে সময়টা ঘোষণা করা হয়েছে তা নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। মাছ শিকার বন্ধের সময়কাল ঠিক হচ্ছে না। ইলিশের প্রজনন সুবিধার জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকছে। কিন্তু ২৩ জুলাই যখন মাছ শিকার শুরু হয় তখন সাগরে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম থাকে। কিছুদিন সময় পেলে এসব মাছ ডিম ছাড়তে পারত। ২০ মে থেকে শুরু না করে যদি জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্টের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত মাছ শিকার বন্ধ রাখা হত তাহলে ডিমওয়ালা ইলিশগুলো ডিম ছাড়ত। এতে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়ত।
ফিশিং ট্রলার মালিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সরকার অনেক বড় সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে। এর সুফলও মিলছে। কিন্তু এই সুফল অনেক বেশি হত, যদি ইলিশের সঠিক প্রজননকালটি চিহ্নিত করা সম্ভব হত। সাগরে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আর মাত্র কয়েক দিন সময় পেলেই মা মাছ ডিম ছাড়ত। এর সুফলও মিলত।
সাগরে প্রচুর ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে জানিয়ে এস এম মামুন মিয়া নামের অপর একজন ট্রলার মালিক আজাদীকে বলেন, এই মাছগুলোকে আরো সময় দিলে ভালো হত। তিনি ইলিশের প্রজননসহ বেড়ে ওঠার সময়কাল নিয়ে সুষ্ঠুভাবে গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, সাগরে ডিমওয়ালা প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথাটি ঠিক। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে। নিশ্চয় ভালো কিছু বের হয়ে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দুই ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়াচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৮৩ দিন পর একশর নিচে শনাক্ত