চট্টগ্রামে দুই ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়াচ্ছে

গণটিকায় আজ একদিনেই দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন দেড় লক্ষাধিক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামে। টিকাদান শুরুর পর গত ৭ মাসে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার সাড়ে ৬ লাখের বেশি মানুষ দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন। তবে গণ টিকার আওতায় আজ ৭ সেপ্টেম্বর একদিনেই দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন দেড় লক্ষাধিক টিকা গ্রহীতা। সে হিসেবে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় দুই ডোজ টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ৮ লাখ পার হচ্ছে আজ।
এছাড়া ১২ লাখের বেশি টিকা গ্রহীতা এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সিটিকর্পোরেশন এলাকায় ১১টি ও উপজেলাগুলোর ১৪টি স্থায়ী কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা দিয়ে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন হয় চট্টগ্রামে। তবে পরবর্তীতে সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকাও আসে। বর্তমানে অ্যাস্ট্রেজেনেকা ও মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজ হিসেবে সিনোফার্মের টিকার প্রয়োগ চলছে।
গণটিকার ২য় ডোজ আজ :
চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে ফের একদিনের গণটিকা দেয়া হচ্ছে আজ। তবে দ্বিতীয় দফা এ গণটিকা কার্যক্রমে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবেনা। গত ৭ আগস্ট একদিনের গণটিকায় প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতারাই আজ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মহানগর ও উপজেলার গণটিকায় যিনি যে কেন্দ্রে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, তারা একই কেন্দ্রে ২য় ডোজ নেবেন। কোনভাবে কেন্দ্র পরিবর্তন করা যাবে না। তবে মহানগরে একদিনে এ গণটিকা দেয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে বেশ কয়দিনে বিভক্ত করে এ টিকা দেয়া হয়। এর মাঝে উপজেলা পর্যায়ে গণ টিকার আওতায় যাদের দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত আছে, তারা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন আজ ৭ সেপ্টেম্বর। যাদের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২য় ডোজ গ্রহনের তারিখ নির্ধারিত আছে, তারা ২য় ডোজ পাবেন আগামীকাল (৮ সেপ্টেম্বর)। আর যাদের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ২য় ডোজের জন্য তারিখ নির্ধারিত রয়েছে, তারা ২য় ডোজ পাবেন ৯ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন এসব তারিখে গণটিকার ২য় ডোজ প্রদান করা হবে কেবল উপজেলা পর্যায়ে। কিন্তু মহানগরে শুধু একদিনেই ২য় ডোজ প্রদান সম্পন্ন করা হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, সিটিকর্পোরেশন এলাকায় শুধু একদিন গণটিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছিল। ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার একদিনেই গণটিকার ২য় ডোজ দেয়া সম্পন্ন করা হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য (৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার প্রয়োগ হয়েছে বেশি। সবমিলিয়ে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ ডোজ অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন। আর এ টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ২৮ হাজার ৭ জন। অ্যাস্ট্রেজেনেকার পর প্রয়োগের দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা। এ পর্যন্ত সিনোফার্মের ৬ লাখ ৭ হাজার ৫৮৫ ডোজ টিকা প্রয়োগ হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। আর বাকি ৫ লাখের মতো টিকা গ্রহীতা সিনোফার্মের এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয় কেবল সিটিকর্পোরেশন এলাকায়। মডার্নার এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৩২ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে পূর্ন (দুই) ডোজ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১ জন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ আগষ্ট গণ টিকা কার্যক্রমে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় সবমিলিয়ে দেড় লক্ষাধিক (১ লাখ ৫৮ হাজার) মানুষ টিকার প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন। এর মাঝে মহানগরেই টিকা পেয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ। আর উপজেলা পর্যায়ে পেয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার জন। সিটিকর্পোরেশন এলাকার ৪১ ওয়ার্ডের ১২৩টি কেন্দ্রে গণ টিকা দেয়া হয়। আর উপজেলা পর্যায়ে টিকা দেয়া হয় ১৯৭টি কেন্দ্রে। এছাড়া মহানগরের ১১টি ও উপজেলা পর্যায়ে ১৪টি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রেও টিকাদান অব্যাহত ছিল। তবে ওই দিন স্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহীতাদের সংখ্যা গণ টিকার হিসেবে আনা হয়নি। গণ টিকার আওতায় সিটিকর্পোরেশন এলাকায় মর্ডানা এবং উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হয় সিনোফার্মের টিকা। ২৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সীরা কেন্দ্রে গিয়ে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দেখিয়ে টিকা নিতে পেরেছেন। তবে আগে থেকে যারা স্থানীয় কাউন্সিলরের তালিকায় নিবন্ধিত ছিলেন, কেবল তারাই টিকা গ্রহনের সুযোগ পেয়েছেন মহানগর এলাকায়। অনেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা তালিকাভূক্তদের টোকেন সরবরাহ করেছেন। কেন্দ্রে গিয়ে ওই টোকেন দেখিয়ে সহজেই টিকা নিতে পেরেছেন মানুষ। ইউনিয়ন পর্যায়েও জনপ্রতিনিধিদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী টিকা দেয়া হয়েছে। টিকাদানের সংখ্যা নির্ধারিত করে দেয়ায় তালিকাভূক্তি বা টোকেন পদ্ধতি অনুসরণ না করে উপায় ছিলনা বলে জানান টিকাদানের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
গণ টিকাদানে সিটিকর্পোরেশন এলাকার প্রতি ওয়ার্ডে তিনটি করে অস্থায়ী কেন্দ্র করা হয়। প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে একটি ওয়ার্ডে মোট ৯০০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতি কেন্দ্রে টিকা পেয়েছেন ২০০ জন। ৭ আগষ্টের গণ টিকা কার্যক্রমে প্রথম ডোজ পাওয়া টিকা গ্রহীতারাই ৭ সেপ্টেম্বরের গণ টিকায় একই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। ওই দিন গণ টিকা কার্যক্রমে নতুন করে কাউকে প্রথম ডোজ দেয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। কেন্দ্রও পরিবর্তন করা যাবেনা বলে জানান তারা।
কত টিকা পেল চট্টগ্রাম : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত (৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সবমিলিয়ে ২২ লাখের সামান্য বেশি ডোজ টিকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। এর মাঝে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ৯ লাখ ১৯ হাজার ১১০ ডোজ, মডার্নার ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৬ ডোজ এবং সিনোফার্মের ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ ডোজ টিকা এসেছে চট্টগ্রামে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামায়াত সেক্রেটারিসহ ৯ নেতা গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধইলিশ শিকার বন্ধ রাখার সময় নিয়ে প্রশ্ন