প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হয়েছে বন্দরনগরীতে। ষাটোর্ধ্ব ওই নারী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছত্রাকজনিত এ রোগের উপসর্গ নিয়ে চারদিন ধরে তিনি চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সন্দেহ হওয়ায় রোগের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ওই রোগী দাঁত ও চোখের বিভিন্ন জটিলতায় আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। পরে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ থাকার কথা নিশ্চিত করে মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল বলেন, লক্ষন রয়েছে। আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। কিছুটা ইনফেকশন পাওয়া গেছে। তবে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। যদিও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাসপেক্টেড ধরেই আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এ রোগীর চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। আরো অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীর নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে হাসপাতালে রাখা হলেও চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকটের কথা জানিয়েছে রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন ওই নারী জ্বরে আক্রান্ত হন। ৩ জুলাই করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ১৫ জুলাই করোনা নেগেটিভ হলেও নানা শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়। ২৪ জুলাই স্বজনরা তাঁকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসকেরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। রোগীর মেয়ে তাহমিনা বেগম জানান, আমার মা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য এমপোটেরিসিন-বি ইনজেকশন প্রতিদিন ৫ ভায়াল করে মোট ১৪ দিন পুশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও তা পাচ্ছি না। রোগীর ছেলে বেলাল হোসাইন বলেন, আমার বাবা পাঁচদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন ওষুধের অভাবে মাকে বাঁচানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল ও মে মাসে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ দেখা দেয়। করোনা থেকে সেরে ওঠা বা সেরে ওঠার পর্যায়ে রয়েছেন, এমন রোগীদের এই ছত্রাকে সংক্রমণ ঘটে। রোগী বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকেও মহামারি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, সাধারণত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও এইডসের মতো রোগে আক্রান্তদের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে থাকে। আগে থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা এসব ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসার সেই সুযোগে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে।
চট্টগ্রামের এই নারীও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন বলে তাঁর মেয়ে জানিয়েছেন। মায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তাঁর দাঁতব্যথা হয়। এরপর মুখ ফুলে যাচ্ছিল। পরে চোখ ও চোখের আশপাশের জায়গায় লালচে কালো হয়ে যাচ্ছিল। একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি মায়ের সিটি স্ক্যান করতে দেন। তিনি বলেন, রিপোর্ট আসার পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলে ধারণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে ২৪ জুলাই মাকে চট্টগ্রামে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ভতির্র পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মায়ের বায়োপসি করতে দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে আসা রিপোর্টে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। আরও অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল বলেন, সবাইকে সঠিক নিয়মে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। সতর্কতা ও সচেতনতাই নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষা দিতে পারে।