ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গতকাল থেকে আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। ফলে গতকাল বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিন নগরীর বিভিন্ন সড়ক ছিল খুবই কর্মব্যস্ত। সড়কজুড়ে ছিল বাস-সিএনজির দাপট। বিধিনিষেধ থেকে মানসিকভাবে মুক্ত নগরবাসী গন্তব্যস্থলে ছুটেছেন আপনমনে। এছাড়া দীর্ঘ বিরতির পর শপিংমল-মার্কেট খোলায় অনেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে হন্য হয়েও ঘুরে বেড়ান। ফলে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে মাঝারি থেকে তীব্র যানজট দেখা দেয়। তবে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো- বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে একদমই উদাসীন ছিলেন। সামাজিক দূরত্বের বিষয় অনেক দূরেই থাকলো, ন্যূনতম মাস্ক পরা লোক ছিল হাতেগোনা। অনেকে মাস্ক কানের এক পাশে ঝুলিয়ে রাখেন, অনেকে থুতনির নিচে নামিয়ে দিব্যি খোশগল্পে মেতে ছিলেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে এমন উদাসীনতায় চট্টগ্রামে করোনার ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে। তাই প্রশাসনকে ন্যূনতম মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে নগরীর প্রবেশমুখ নতুন ব্রিজ, অক্সিজেন মোড়, সিটি গেট এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা লোকে লোকারণ্য ছিল। এসব এলাকায় যানজট দেখা দেয়। তবে যানবাহন সংকটের কারণে অনেক বাস-টেম্পুতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। এছাড়া দিনভর বিভিন্ন মোড়েও যানজট লেগে ছিল। ফলে করোনাপূর্ব চেনারূপেই যেন ফিরলো নগরী। গতকাল নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় কথা হয় পটিয়ার বাসিন্দা আরিফ নেওয়াজের সাথে। তিনি জানান, অফিস খুলেছে, তাই গ্রাম থেকে আসতে হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ বাড়লেও এখন আসলে আমাদের কিছুই করার নেই। পেট তো চালাতে হবে। ঘরে বসে থাকা তো আর সম্ভব না। অক্সিজেন মোড়ে ফটিকছড়ির ভূজপুরের বাসিন্দা মোজাহের মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ব্যবসার কাজে ফটিকছড়ি থেকে শহরে এসেছি। করোনার দিকে তাকিয়ে থাকলে তো আর বাঁচতে হবে না। মুখে মাস্ক কেন নাই এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়েছি। শুনেছি দুই ডোজ দিলে নিরাপদ হয়ে যায়। তাই মাস্ক আনিনি। মোজাহেরের মতো শত শত লোককে মাস্ক ছাড়াই দিব্যি গন্তব্যস্থলের দিকে ছুটে যেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে নগরীর শপিংমল-মার্কেটগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে টেরীবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেন এবং জহুর হকার্স মার্কেটের সরু গলিগুলোতে একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে ক্রেতারা কেনাকাটা সারেন। জহুর হকার্স মার্কেটে আসা ক্রেতা ইমরান আহমেদ বলেন, অনেকদিন মার্কেট বন্ধ ছিল, শুনলাম কোরবানির পরে আবারও মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করতে এসেছি। এখন করোনা বাড়ছে এটি ঠিক, তবে আল্লাহ না চাইলে কোনো চেষ্টা করেই আপনি বাঁচতে পারবেন না।
রিয়াজুদ্দিন বাজারে কথা হয় গৃহিনী জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে। তিনি বলেন, গৃহস্থলীর কিছু টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে মার্কেটে এসেছি। করোনা বাড়লেও কি করবো। প্রয়োজনীয় কাজ না করে তো বসে থাকতে পারি না।
জানতে চাইলে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু বকর সিদ্দিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার লকডাউন ৮ দিনের জন্য তুলে দেয়ায় সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বেপরোয়াভাবে ঘুরবে। তবে আমাদের দেশ যেহেতু জনবহুল, তাই সামাজিক দূরত্ব মানা কঠিন। সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না হলেও সবার মুখে অন্তত যেন মাস্ক থাকে। উভয়ের মাস্ক থাকলে ৯০ শতাংশ সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে অবশ্যই তদারকির পাশাপাশি জরিমানার অংকটাও বাড়াতে হবে। মোটা অংকের জরিমানা করা হলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। এখন গরুর হাটের বিষয় আছে। তাই এখন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন না হলে করোনা পরিস্থিতি কিন্তু চরম অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো-অনেকে একই মাস্ক অনেকদিন পরেন। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। একটি সার্জিক্যাল মাস্ক সাবান ধুয়ে হলেও দুই তিনদিনের বেশি যাতে পরা না হয়। যদিও গাইডলাইন বলে- একটি মাস্ক একদিনই পরতে হবে। তবে একদম না পরার চেয়ে ধুয়ে দুই তিনদিন পরা অবশ্যই ভালো।