বেড়েছে কোরবানি পশুর সরবরাহ তাড়াহুড়া নেই ক্রেতাদের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৫ জুলাই, ২০২১ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন কোরবানি পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি সেলিম। তিনি একটি গরুর দাম হাঁকালেন তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতা বলছেন দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। দরদাম না হওয়ায় গরুটি বিক্রি করেননি তিনি।
জানতে চাইলে আজাদীকে বলেন, গরুটির পেছনে আমার দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। লোকসান দিয়ে তো বিক্রি করতে পারবো না। খরচ ও ক্রেতার চাহিদায় টাকার ফারাক আলোচনার মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারতেন কিনা এমন প্রশ্নে বেপারি সেলিম বলেন, বাজার তো মাত্র শুরু হলো। আরো কয়েকদিন সময় আছে। দেখি সামনে কি হয়। সল্টগোলা বাজারের এ বেপারির কথা শুনেই বোঝা যায়, অল্প লাভে বিক্রি বা সহজে দাম কমানোর পক্ষপাতি নন তারা। একইভাবে সময় আছে বলে তাড়াহুড়া নেই ক্রেতারও। শুধু সল্টগোলা নয়। নগরের সবগুলো পশুর হাটের চিত্র একই। গরুর সরবরাহ এবং ক্রেতার উপস্থিতি বাড়লেও বিক্রি তুলনামূলক কম। সেক্ষেত্রে দুইপক্ষের সমান আগ্রহই দেখা গেছে। গতকাল বুধবার ছিল কোরবানি পশুর হাটের তৃতীয় দিন। গত সোমবার থেকে হাটগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে, যা চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। নগরে এবার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় অনুমোদিত পশুর হাট বসেছে ছয়টি। হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট, কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১ নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে প্রচুর গরু এসেছে বাজারে। গতকালও প্রতিটি বাজারে ট্রাক থেকে গরু-ছাগল নামাতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে স্থানীয়ভাবে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরু দেখা গেছে। সাগরিকা বাজারের বেপারি মোজাম্মেল বলেন, খুব খারাপ অবস্থা। সবাই দাম দেখে চলে যাচ্ছেন। কিনছেন না। মজিদ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে গরু আছে। তবে দাম বেশি। আমি এক লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটা গরুর দাম বললাম। কিন্তু বিক্রেতা দুই লাখ ১০ হাজার টাকার কমে দিবে না। তাই নিইনি। আমার অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, এ গরুর দাম এক লাখ ৯০ হাজার টাকা বেশি হলে ক্রেতার লস হবে। কিন্তু তারা ছাড় দিবে না।
বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, প্রচুর গরু আসছে। মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার বিক্রি বেশি হয়েছে। আজ (গতকাল) সর্বোচ্চ এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা দামের গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বেপারিদের নিরাপত্তায় সিএমপি সহযোগিতা করছে।
বিবির হাট বাজারের বেপারি বাবুল বলেন, পৌনে দুই লাখ টাকায় আজ একটি গরু বিক্রি করেছি। দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে।
বাজার উদ্বোধন মেয়রের : সোমবার থেকে বিক্রি শুরু হলেও গতকাল বিকেলে সল্টগোলা বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেয়র জোউল করিম চৌধুরী। এ সময় মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্ট। বাজারে তো মানুষ আসবে। তবে তাদের কন্ট্রোল করাটা বড় ব্যাপারে। ইজারাদারদের বলে দিয়েছি, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেন। আমাদের মনিটরিং টিমও বিষয়গুলো দেখছেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনেই পশু বেচা-কেনা চলবে। চলমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতির কারণে কোরবানির পশুর বাজারে প্রশাসন ও চসিকের সর্বাত্মক সর্তক নজরদারি রয়েছে। তাই কোন বিচ্যুতি বা নিয়মনীতি পালনে ব্যত্যয় ঘটলে বাজার কর্তৃপক্ষকে চরম মূল্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, জিয়াউল হক সুমন, মো. আবদুল মান্নন, মো. মোরশেদ আলী, ইজারাদার আবু ছালে জুয়েল প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআরবির হাসপাতাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আ. লীগ নেতারা
পরবর্তী নিবন্ধলকডাউন শিথিলের আগে খুলেছে কিছু মার্কেট