চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রস্তাবিত পৌরকরের বিপরীতে মাত্র ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে! যা টাকার অংকে ৫০ কোটি টাকা। যদিও প্রস্তাবিত পৌরকরের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৬২ টাকা। প্রতি বছর তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করে বন্দর। এরপরও সংস্থাটিকে বিশাল অংক ছাড় দিয়েছে চসিক। এতে বেসরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ সাধারণ পৌরকরদাতার ওপর চাপ বাড়ার আশংকা রয়েছে।
চসিক সূত্র জানায়, পৌরকর নির্ধারণে ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিকী করপুনর্মূল্যায়ন করেছিল সংস্থাটি। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে পৌরকর নির্ধারণ করা হয় ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৬২ টাকা। প্রস্তাবিত এ পৌরকরের বিরুদ্ধে ওই সময় আপীলও করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পঞ্চবার্ষিকী করপুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যা ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর বন্দরকে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর পরিশোধ করতে চিঠি দেয় চসিক। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ বোর্ড সভায় ৪৫ কোটি টাকা পৌরকর পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে গত ১৫ মার্চ চসিকের সঙ্গে বন্দরের একটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সভা হয়েছিল পৌরকর ইস্যুতে। এতে নতুন করে করপুনর্মূল্যায়ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সে অনুযায়ী একটি যৌথ কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটি ২৯ এপ্রিল বৈঠক করেও সুরাহা করতে পারেনি। সর্বশেষ গত ২০ জুন বন্দর ভবনে চসিক মেয়র ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আরেকটি যৌথ সভা হয়। এতে ৫০ কোটি টাকা পৌরকর নির্ধারণে একমত হয় দুই পক্ষ। এর ফলে ১১০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৬২ টাকা ছাড় পায় বন্দর। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পূর্বে বন্দরে স্থাপনার বিপরীতে পৌরকর ধার্য করা হয়েছিল ২০১১ সালে। যা ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর সর্বশেষ রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা চূড়ান্ত হয়েছিল। যা সারচার্জ মওকুফের সুযোগ নিয়ে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে পরিশোধ করে আসছে বন্দর।
এদিকে গত মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ১ম কোয়ার্টার থেকে পরবর্তী করপুনর্র্মূল্যায়ন পর্যন্ত চসিককে ৫০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করবে বন্দর। ওই হিসেবে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রথম কোয়ার্টার পর্যন্ত বকেয়া ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব ছিল। এর বিপরীতে তারা (বন্দর কর্তৃপক্ষ) আপীল করে। এখন আলাপ-আলোাচনা করে ৫০ কোটি টাকা ধার্য করেছি। তারা বলেছে, আগে ৩৫ কোটি পরিশোধ করতো। সেখান থেকে এক লাফে ১৬০ কোটি টাকার প্রস্তাব অপ্রত্যাশিত। আমরাও সামাগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপাতত যেটা ধার্য করেছি ভবিষ্যতে সেটাকে আরো বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা আছে।
জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২১ এর চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন এই আইনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ শতাংশ অর্থ চসিককে প্রদানের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই প্রতি বছর বন্দরের আয় থেকে এক শতাংশ পাবে চসিক। এক্ষেত্রে মোট আয় থেকে দিবে নাকি নীট মুনাফা থেকে দিবে তা স্পষ্ট হয়নি।
এদিকে বন্দরের আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সংস্থাটি নীট মুনাফা করেছে ৭২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যার এক শতাংশ হলে চসিক পাবে ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। একই অর্থ বছরে বন্দরের আয় হয়েছিল তিন হাজার ১৬৬ কোটি ২২ লাখ। সরাসরি আয়ের বিপরীতে হলে চসিক পাবে ৩১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অতচ ২০১৭ সালের প্রস্তাবিত পৌরকর আদায় করতে পারলে চসিকের আয় কয়েক কয়েকগুণ বেড়ে যেত। বন্দর থেকে কাঙ্খিত পৌরকর আদায় করতে পারলে নগর উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলেও বিভিন্ন সময়ে চসিকের মেয়রসহ দায়িত্বশীলরা বলেছিলেন।