মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকার ব্রিটিশ দূতকে তলব

| সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে ডেকে দেশটির সামপ্রতিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ‘হতাশার’ কথা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল রোববার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার জাবেদ প্যাটেলকে তলব করার কথা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) গত বৃহস্পতিবার ২০২০ সালের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, গতবছর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘সার্বিক কোনো উন্নতি হয়নি’। খবর বিডিনিউজের।
রাজনৈতিক পরিবেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ২০২০ সালে ‘নিয়ন্ত্রিত ছিল’ মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে কারামুক্তির প্রসঙ্গও প্রতিবেদনে আনা হয়। সেখানে বলা হয়, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা ও বিদেশ না যাওয়ার শর্তে সাজা স্থগিত করে গত বছর মার্চে ছয় মাসের জন্য খালেদা জিয়াকে জেল মুক্তি দেয় সরকার। সেপ্টেম্বরে এসে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়, ২০২০ সালের পুরো সময় তিনি ঢাকায় গৃহবন্দি ছিলেন। খালেদা জিয়াকে সেখানে ’গৃহবন্দি’ বলার প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে বলা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থাকে ‘গৃহবন্দিত্ব’ হিসাবে বর্ণনা করা বিভ্রান্তিকর।

তার কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার দণ্ডবিধি-১৮৯৮ অনুসারে ২০২০ সালের মার্চে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা এবং বিদেশ না যাওয়ার শর্তে তাকে ‘মুক্তি’ দিয়েছে। এটাও জানানো হয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে তার মুক্তির মেয়াদ ছিল ছয় মাস এবং পরে ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর এবং ২০২১ সালের মার্চে দুই দফা তা বাড়ানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে বলা হয়েছে, এ ধরনের আইনি বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যেন পরামর্শ করা হয়।
আর যুক্তরাজ্য সরকারের নথিতে বাংলাদেশ সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিয়ে ‘ইংগিতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও ব্রিটিশ দূতকে পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তা নিয়েও সরকার উদ্বেগ জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্রিটিশ দূতকে এও বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদনে ব্যবহার করা কিছু ’পরিভাষা’ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের মতৈক্যে কিংবা দেশীয় আইনে স্বীকৃত নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্রিটেনের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জেনেছেন এবং এফসিডিও কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমুখী অংশীদারিত্বকে যুক্তরাজ্য গুরুত্ব দেয় এবং মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়ে বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় সংলাপের আগ্রহ পোষণ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উইংয়ের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী ব্রিটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের ডেকে এই আলোচনা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরিংকি ও পাখি যা করে
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে ‘আসল-নকল’ ধস