একটা অদ্ভুত অ্যালিয়েন আমি। নেমেছি, লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ভয়ঙ্কর এক গ্রহ থেকে। গ্রহটিতে আমাদের মত অসভ্য প্রাণির রাজত্ব চলছে ধূমছে। জেলি ফিশের মত থিকথিকে স্বচ্ছ শরীর আমাদের। আবার ইচ্ছেমত বদলাতে পারি অবয়ব, স্বভাব। সামনে যা পাই তাই খেয়ে ফেলি। খাদ্য বা পছন্দের বস্তু না পেলে নিজেরা অন্যদেরগুলো কেড়ে খাই। বাধা দিলে টুপ করে গিলে ফেলি। যার বেশি শক্তি সে তার চে’ দুর্বলকে যখন খুশি সাবড়ে দেয়। কোন আইনের ধার ধাওে না। গ্রহটায় সবসময় বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। প্রশাসন চেষ্টা করে খুব। কিন্তু কিছুই হয় না। কারণ প্রশাসনের চূড়ো বা নানা স্তরে যারা আছে, তারা তো ভিনগ্রহের কোন সভ্য-ভব্য জীব না। আমাদের গ্রহের আমাদের মতই খাদক-ভাই বেরাদর। বুদ্ধি-চালাকি চাতুর্যে এগিয়ে থাকায় উঁচু পদগুলো ভাগিয়ে নিয়েছে। তারাতো আরও বেশি বেশি খেতে চায়। খেতে পায়ও অজস্র। তাদের পকেটে নিয়ে বেশি বলশালীরা সব লোপাট করে দেয়। শীর্ষ পর্যায় থেকে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা রাখা হলেও দায়িত্বে তা জেলি ফিশ! স্বভাবদোষে সব সিস্টেমের গিয়ারবঙ জ্যাম হয়ে গেছে। সর্বোত চেষ্টা করেও কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না। আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি প্রয়োগে বাম্পার খাবার উৎপাদন হচ্ছে গ্রহে। তবুও খাদ্য সঙ্কট যাচ্ছেই না। এতে শক্তিমানরা আরো বেশি বেশি শক্তিশালী হচ্ছে, নিঃশেষ হচ্ছে দুর্বল। এমন চলতে থাকলে গ্রহটা দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবেই। তাই আগেভাগে চম্পট দিয়েছি, অজানা এই গ্রহে।
এখানে প্রচুর খাবার। সামনে যা দেখি, তাই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। খাচ্ছিও। বিশাল চোখজোড়া আমার জেলি অস্তিত্বটাকে আরও ভয়াল করে তুলেছে। সাদা তিমি বা হাঙ্গরের মত দাঁতালেরাও পানিতে আমার মত আগন্তুকের ছায়া দেখলেই সাগরে তোলপাড় তুলে পালায়। দিগন্তহীন বিশাল মহাসমুদ্রের আমিই সম্রাট। পাহারায় রেখেছি বাছাই করা কিছু অক্টোপাস। ওদের বাহন কটি রাক্ষুসে নীল হাঙ্গর। চুপচাপ আমাকে ঘিরে রাখে তারা। নিয়ে যায় বড় বড় শিকারের কাছে। আমাকে কিচ্ছুটি করতে হয় না। শুধু গোল গোল আগুন চোখের লেজার বিম ছাড়ি,শিকারের ঘাড়-মাথা নিশানা করে। এক ঝলকেই শিকার নেতিয়ে পড়ে থাকে। বডিগার্ড অক্টোপাস বহর গাড়ি থুড়ি হাঙ্গরের পিঠ থেকে বিদ্যুৎ বেগে নেমে পড়ে। শিকার ওদের দশগুণ বড় হলেও বিষাক্ত পা মেলে জড়িয়ে ফেলে। নিয়ে আসে কাছে। আয়েস করে পুরো দেহটি শিকারের সাথে মিশিয়ে দিই। গোপন মুখ বের করে কব্জা করে গিলে ফেলি আলগোছে। না, খিদে মেটে না। হজম হয়ে যায় দ্রুত। এভাবে বেশ মজা করে পার হয় একেকটি দিন। বিশাল থেকে বিশালতর হয় আমার আকৃতি। গুটিয়ে নিয়ে ঘুমাতে গেলে শরীর হয়ে যায় আস্ত এক গোল পাহাড়। কিন্তু শিগগিরই মহা জ্বালা দেখা দিল। দ্রুতই সবকটি মহাসমুদ্রের প্রাণি কমতে থাকে। তিমিসহ সবার বংশ প্রায় শেষ। ওদিকে খিদের আগুন আরও বেশি জ্বলতে থাকে। খাবার খুঁজতে সাত মহাসাগর দাপিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। খাবারের যোগান অর্ধেকে নেমে আসে। শেষে আরও কম। আর ক’দিন পর জীবন্ত প্রাণিই শেষ! খিদের আগুনে শেষ পর্যন্ত বডিগার্ড অক্টোপাস ও বাহন নীল হাঙ্গরদেরও সাবড়ে দিই। তারপর– শূন্যতা শুধুই শূন্যতার হাহাকার দিক- সীমানাহীন বিপুল নোনাজলে গুমড়ে মরে ! হাহাকারের তীব্র শিস আমাকে পাগল করে দেয়, অস্থির করে দেয়!’
ঘুম ভেঙে যায় তীব্র আতঙ্ক আর অস্থিরতার ধাক্কায়। সারা শরীর ঘেমে-নেয়ে এক সা! স্বপ্ন দেখিনা, বহুদিন। দেখলেও মুছে যায় জেগে উঠার সাথে-সাথেই। এটা কেমন স্বপ্ন! স্বপ্নতো না, দুঃস্বপ্ন। মহাপুরুষ বা সিদ্ধ পুরুষ হলে হয়তো কোন মেসেজ পেতেন দুঃস্বপ্ন থেকে। সেমত ব্যবস্থাও নিতেন। কিন্তু আমিতো খুবই সাধারণ আম জনতার একজন। ভয়ঙ্কর প্রটোকল ঘেরাও-এর শিকারি অ্যালিয়েন জেলি ফিশ হলাম কেন? দেশেতো প্রটোকল নিয়ে সরকারি ভিআইপি এবং ব্যাক্তিগত বডিগার্ড বহর নিয়ে চলাফেরা করেন কিছু কর্পোরেট প্রধান। ওনাদের আসা-যাওয়া হয়, সাইরেন, হুইশেলের তীব্র হুঙ্কার তুলে। যানবাহন, পথচারী সরে যায়, রাস্তা সাফ করে দিতে। এরা তো শিকারি না, জন খাদেম! তাহলে, কী দেখলাম এসব! আসলে দেশ কী কোন ভয়ঙ্কর খাদের দিকে এগুচ্ছে! নাকি হাঁদারামের দুঃস্বপ্নটাও ভেজাল? বিশ্বাস, তাই যেন হয়।