রেলওয়ের আইবাস সিস্টেম জটিলতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫শ’ ট্রেন চালক, সহকারী চালাক, গার্ড ও টিটিই। রেল সৃষ্টির পর থেকে ট্রেন চালকরা দিনে এবং মাসে যত ঘণ্টা ট্রেন চালান মাস শেষে বেতনের পাশাপাশি তত ঘণ্টার মাইলেজ ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু আগামী জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে রেলওয়েতে ডিজিটাল সিস্টেম-আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতিতে বেতন-ভাড়া পরিশোধের নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থা চালু হলে ট্রেনের লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক), সহাকারী লোকোমাস্টার (সহকারী ট্রেন চালাক), গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ও টিটিইরা মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার মাইল ট্রেন চালালেও ৩ হাজার মাইলের বেশি ভাতা পাবেন না। যার ফলে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই ডিজিটাল সিস্টেমে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী প্রতি মাসে ৩ হাজার মাইল ট্রেন চালানোর ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার আজাদীকে জানান, সারাদেশে আমাদের ১১শ’ লোকোমাস্টার এবং সহকারী লোকোমাস্টার আছেন। একই সাথে ৬শ’ জনের মতো ট্রেন চালক (গার্ড) আছেন। এছাড়াও ৮০০ টিটিই আছেন। ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে আসছেন এই তিন স্তরের কর্মচারীরা। আমরা যারা রেলওয়ের রার্নিং স্টাফ লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার এবং টিটিই, আমরা রেল সৃষ্টির শুরু থেকে রেলওয়ে কোডের বিধান মতে ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য বা প্রতি ১০০ মাইল ট্রেন চালালে ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অতিরিক্ত মাইলেজ (ভাতা) পেয়ে থাকি। যা ট্রেন চালানোর সময় খাওয়া-দাওয়া বাবদ ব্যয় করতে হয়। এই হিসেবে ৬ থেকে ৮ হাজার মাইল ট্রেন চালালে ৬০ থেকে ৮০ দিনের মাইলেজ ভাতা হিসেবে মাসিক বেতনের সাথে নিয়মিত পেয়ে আসছেন। বর্তমানে আগামী ১ জুলাই থেকে রেলওয়েতে ডিজিটাল সিস্টেম-আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে। যাতে ৩ হাজার মাইল তথা ৩০ দিনের বেশি মাইলেজ যুক্ত হওয়ার (৩০ দিনের বেশি ভাতা) ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যার কারণে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন আজাদীকে জানান, আইবাস সিস্টেমের জটিলতা নিয়ে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীদের যে দাবি-সেই বিষয়ে আমি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। তারা যে সদস্যার কথা বলছেন বিষয়টি আমি অবহিত করেছি। যাতে সমাধান করা যায়। যদিও বিষয়টি আমাদের হাতে না। এটি অর্থমন্ত্রণালয়ের। তারপরও আমি যোগাযোগ করেছি এবং তাদের অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছি।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান আজাদীকে জানান, আমাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বসার জন্য আমরা লিখিত আকারে রেলমন্ত্রী মহোদয়, ডিজি এবং এডিজিকে (আরএস) জানিয়েছি। আজকে ১০ দিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো আমাদের সাথে বসেনি। অথচ আগামী ১ জুলাই থেকে আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে। আমাদের একজন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক), সহাকারী লোকোমাস্টার (সহকারী ট্রেন চালাক), গার্ড (ট্রেন পরিচালক), টিটিই যদি ৬ হাজার মাইল ট্রেন চালান- আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেম চালু হলে রানিং স্টাফদের অর্জিত মাইলেজ সবোর্চ্চ ৩ হাজার মাইলের তথা ৩০ দিনের বেশি অন্তর্ভুক্ত হবে না। অতিরিক্ত ৩ হাজার মাইলের মাইলেজ ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন আমাদের কর্মচারীরা। যদি ৩ হাজার মাইল ট্রেন চালানোর পর তার বেনিফিট না পান তাহলে তিনি কেন ট্রেন চালাবেন। তাহলে ৩ হাজার মাইলের বেশি কেউ ট্রেন চালাবেন না। এর ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একটা বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। স্বচ্ছতার জন্য আইবাস সিস্টেম চালু হলেও আমাদের রেল ভবনের কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাই আমরা আজকে (গতকাল সোমবার) চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাকশি, লালমনিরহাট রেলওয়ের ৪ ডিবিশিনে রেলওয়ে ম্যানেজারদেরকে একযোগে স্মারকলিপি দিয়েছি।
এদিকে গতকাল বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টাফদের মাইলেজ (পার্ট অব পে) পূর্বের ন্যায় বেতন কোড থেকে দেয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে তারা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) তারেক মোহাম্মদ সামস তুষারের কাছে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
সকাল ১১টায় বিভাগীয় ব্যবস্থাপককে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে রার্নিং স্টাফদের প্রাপ্ত ‘মাইলেজ’ রেলওয়ে কোডে ‘পার্ট অব পে’ হিসেবে স্বীকৃত রেল সৃষ্টির শুরু থেকে রেলওয়ে কোড এবং ম্যানুয়ালের বিধানমতে রানিং স্টাফরা মাসিক নিয়মিত বেতন বিলের সাথে অর্জিত মাইলেজ সংযুক্তভাবে পেয়ে আসছেন এবং এটি বেতন বাজেটের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০১৯ সালে আমাদের অগোচরে বেতনের অংশ মাইলেজ বেতন বাজেট থেকে আলাদা করে টিএ খাত হতে প্রদান করা হয়। তাতে নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়। ফলে টিএ খাতের কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এর ভিত্তিতে এডিজির কাছে মাইলেজ অর্থাৎ ‘পার্ট অব পে’ পূর্বের ন্যায় বেতেন বাজেটে বহাল রাখার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি বিষয়টি সুবিবেচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায় মাইলেজের জন্য ‘মাইলেজ ভাতা’ নামে আলাদা কোড খোলা হয়। যা ওই কোডে আইবাস সিস্টেমে রানিং কর্মচারীদের অর্জিত মাইলেজ সর্বোচ্চ (৩ হাজার টাক) তিন হাজার মাইল তথা ৩০ দিনের বেশি অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে রানিং স্টাফদের এই মাইলেজ নিয়ে সময়ে সময়ে প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সরকার বিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্র করেছে। বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এই মাইলেজ ‘পাট অব পে’ হিসাবে পূর্বের ন্যায় রেলওয়ে কোড ও বিধি বিধানের আলোকে প্রদানের অনুমোদন আছে।
যুগ যুগ ধরে বহাল থাকা ‘পার্ট অব পে’ মাইলেজ পর্ূবের ন্যায় বেতন বাজেটে অন্তর্ভুক্ত রেখে কোড ও ম্যানুয়ালের বিধানমতে প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধাণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, খুরশিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এমএম সাহেদ আলী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল বারি, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মীর এবি এম শাফকুল আলম রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সাইমুম হোসেন ভোর এবং রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল এর সভাপতি রোকন উদ্দিন, শাখা সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আমীন প্রমুখ।