মামলার প্রধান আসামি নাসিরসহ গ্রেপ্তার ৫

পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা

| মঙ্গলবার , ১৫ জুন, ২০২১ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলায় দুই আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০) ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। নাসির ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি)। গত ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবে নাসির ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার বিকালে বলেন, ঢাকা মহানগরের গোয়েন্দা পুলিশ নাসির উদ্দিন মাহমুদকে অ্যারেস্ট করেছে। আগের দিন রাতে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানানোর পর গতকাল সকালে সাভার থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের করেন পরীমনি। পরে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে নাসির ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা জেলা পুলিশের একটি দল উত্তরায় নাসিরের বাসায় অভিযান চালায়। ওই দলটিকে সহায়তা করতে উত্তরা বিভাগের একটি দলও সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে নাসিরকে পাওয়া যায়নি। পরে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে অমির ভাড়া করা বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ।
অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, নাসির ও অমি ছাড়াও তিন নারীকে ওই বাসা থেকে আটক করা হয়েছে। নাসিরের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে বলে আমরা জেনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তদন্তের জন্য পুলিশ বোট ক্লাবে যাবে এবং অন্য যারা আসামি আছে, তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান যুগ্ম কমিশনার হারুন।
এক প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, যাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি তাদের কাজই মদের ব্যবসা করা। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ছোট ছোট মেয়েদের রক্ষিতা রাখেন, মদের ব্যবসা করেন। যদিও আমরা তদন্ত করছি, এ ধরনের অভিযোগ সত্য কিনা। পরে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার তিন নারীর পরিচয় প্রকাশ করেন যুগ্ম কমিশনার হারুন।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার নারীরা নাসির বা অমির স্ত্রী নয়; তাদের মাসিক টাকা দিয়ে আমোদ ফূর্তি করার জন্য রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে। উত্তরার ওই বাসা থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ-বিয়ারের পাশাপাশি এক হাজার ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে আরও দুটো মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করা পরীমনি পুলিশি পাহারায় আছেন। তার বাড়ির সামনে এক ভ্যান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ নূরে আজম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বারবার বলছিলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। তার আশঙ্কা, তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। এসব বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন পরীমনি।
অপরদিকে নাসির ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল রাত ৮টায় আবারো গুলশানে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন পরীমনি। তিনি বলেন, আমি অনেক খুশি। অনেক শান্তি লাগছে। যারা আমার পাশে ছিলেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই লড়াইটা কতটা কঠিন, সেটা গত চার দিনে বুঝে গেছি। যতক্ষণ না সুবিচার পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।
যা ঘটেছিল : পরীমনি তার মামলায় বলেছেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও অমির সঙ্গে দুটো গাড়িতে তারা উত্তরার দিকে যান। তার ছোটবোনও সেসময় সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু অমি ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সেখানে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ‘জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা’ করেন এবং এক পর্যায়ে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন বলে অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
মামলার আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিচ্ছে’ বলেও এজাহারে অভিযোগ করেছেন তিনি। নাসির উদ্দিন মাহমুদকে প্রধান আসামি করে মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয় অমিকে। বাকি চারজনকে এজাহারে দেখানো হয় ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে, যারা প্রধান আসামিকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আগের দিন রাতের সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেছিলেন, সেদিন বোটক্লাব থেকে ছাড়া পেয়ে বনানী থানায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুখে মদের গন্ধ থাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা তার কথা শুনতে চাননি। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে ওয়াশ করার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তিনি বাসায় চলে যান।
যেখানে ওই ঘটনা ঘটেছে, সেই ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তার কাছে নালিশ দিতে গিয়ে সফল হননি বলেও সংবাদ সম্মেলনের দাবি করেন পরীমনি। এ বিষয়ে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাসির যা বলছেন : গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে অমির বাসায় কয়েকটি টেলিভিশনের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন আবাসন ও ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত নাসির উদ্দি মাহমুদ। ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, সেই রাতে পরীমনিরা বোট ক্লাবে গিয়ে কাউন্টার থেকে ‘জোর করে দামি ড্রিংকস’ নেওয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, তারা তো মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদের বাধা দিয়েছি, এটা নেওয়া যাবে না। এটা বিক্রিযোগ্য না। এরপরই সে উত্তেজিত হয়ে যায়। তারপর সে আমাকে গালাগালি শুরু করে। আমার স্টাফরা তাকে থামানোর চেষ্টা করে।
কার কথা বলছেন- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে নাসির বলেন, ওই পরীমনি। ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত তাকে আমি চিনতাম না। ওই সময় আমি তাকে থামাতে চেষ্টা করি। তার সঙ্গে যে ছেলে ছিল সে আমাকে চড় থাপ্পড় দেয়, ও (পরীমনি) গ্লাস মারলে আমার ঘাড়ে লাগে। এই অবস্থায় আমার সিকিউরিটিদের আমি নির্দেশ দিই, সিকিউরিটিরা তাকে নিয়ে যায়। ততক্ষণে সে অনেক ড্রিংক করে ফেলেছে। সিসি ক্যামেরায় দেখবেন ড্রিংক করা অবস্থায় গাড়িতে উঠতে পারছে না। পরের দিনই আমাদের ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী রিপোর্ট করা হয়েছে। আমাদের স্টাফরা লিখিতভাবে সমস্ত রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে স্পষ্ট, আমার সঙ্গে তার কিছুই হয়নি।
আবাসন ব্যবসায় যুক্ত নাসির কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের এমডি। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নাসির উদ্দিন আহমেদ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক কোনো ঘটনা আগে ঘটেনি। দলের জ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলড়াই চালিয়ে যেতে চাই : পরীমনি
পরবর্তী নিবন্ধআন্দোলনে যাচ্ছেন চালক সহকারীরা ট্রেন চলাচল বন্ধের শঙ্কা