করোনাভাইরাস মহামারী আবারও মারাত্মক আকার ধারণ করার পর প্রতিদিন হাজারও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে হাসপাতালের শয্যা সঙ্কট তৈরি হলে, সে কারণে বাড়িতেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করছেন অনেকে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অনেকেরে ফুসফুস সংক্রমণের কারণে স্বাভাবিকভাবে বাতাস থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিতে পারে না। তাদের কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। খবর বিডিনিউজের।
তবে শুধু অক্সিজেনের সিলিন্ডার আনলেই তো হবে না, তা ব্যবহার করাও জানতে হবে। আর সেখানেও প্রয়োজন আছে অনেক সতর্কতার। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে। অক্সিজেন কখন ব্যবহার করতে হবে : রক্তে অক্সিজেন বা ‘এসপিওটু’য়ের মাত্রা ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে গেলেই কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্তে অক্সিজেনের আদর্শ মাত্রা ৯৪ থেকে ৯৯ শতাংশ। যদিও কোনো অক্সিজেন থেরাপি তাৎক্ষণিক রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে বা স্বাভাবিক করতে পারে না। তবে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ৮৮ থেকে ৯২ শতাংশ ‘স্যাচুরেশন’ পাওয়াই হবে অত্যন্ত উপকারী। ১০০ শতাংশ ‘স্যাচুরেশন’য়ে কখনই পৌঁছানো উচিত নয়। সুস্থ কিংবা অসুস্থ, শতভাগ ‘স্যাচুরেশন’ হবে অক্সিজেনের অপচয়। একদিকে কারও জন্য অক্সিজেন দুষপ্রাপ্য, অপরদিকে কিছু মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মজুদ করে রাখছেন। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের নিবেদন, প্রয়োজন অনুযায়ী নেওয়া। একজনে অতিরিক্ত মজুদ হবে অন্যের দুষপ্রাপ্যতার কারণ।
‘স্যাচুরেশন’য়ের লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু হওয়া উচিত: ভারতের ‘এআইআইএমএস নিউ দিল্লি’ল প্রধান ডা. রানদিপ গুলেরিয়া বলছেন, যাদের অক্সিজেন ‘স্যাচুরেইশন’য়ের মাত্রা ৯২ থেকে ৯৪ শতাংশ, তাদের অক্সিজেন নেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটা আপনাকে কোনো উপকার দেবে না। আর এর বেশি হলে তো কথাই নেই। যাদের ৯৪ শতাংশের কম তাদের নিবিঢ় পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখতে হবে। তারও যদি অবস্থা স্থিতিশীল থাকে তবে অক্সিজেন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা শ্বাসতন্ত্রের দূরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ‘স্যাচুরেইশন’ বেশি রাখতে হয়। তাই বলে ৯৭ শতাংশতে রাখাও অপচয়। এছাড়াও একজন রোগীর প্রতি মিনিটে কত লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকই নিতে পারেন। সেই হিসেবের ওপর নির্ভর করবে একটি সিলিন্ডার কতক্ষণ চলবে আর কখন তাতে নতুন অক্সিজেন দিতে হবে।
অক্সিজেন দেওয়া মানেই সমস্যার সমাধান নয়: কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহ করার পর রোগী ঝুঁকিমুক্ত হয় না। তাই তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও নাড়ির স্পন্দনের গতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। এথেকেই বোঝা যাবে শরীর রোগের সঙ্গে কতটুকু লড়তে পারছে, কৃত্রিম অক্সিজেন তার কোনো উপকারে আসছে কি না। অক্সিজেনের মাত্রায় ওঠানামা চোখে পড়লে প্রতি দুই ঘণ্টায় পরিমাপ নিতে হবে এবং দেখতে হবে কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়ায় অবস্থা উন্নতি হচ্ছে কি না। যদি উন্নতি না হয় তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার: অনভিজ্ঞ হাতে অক্সিজেন মাস্ক বা ‘নেসাল ক্যানুলা’ বেশ ঝামেলার বিষয় হতে পারে। ভাইরাস থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক পরার মতো অক্সিজেন মাস্কটিই রোগীর মুখে বায়ুরোধকভাবেই বসাতে হবে। রোগীর মুখের আকৃতি হিসেবে করে মাস্ক বেছে নেওয়াটা এক্ষেত্রে বিশেষ জরুরি। এই মাস্কেও থাকে ‘নোজ ক্লিপ’ কিংবা পেছনের ফিতা, যার সাহায্যে মুখের ওপর আঁটসাঁট করে অক্সিজেন মাস্কটি বসানো যায়। সঠিক মাস্ক বেছে নেওয়া এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তা বহুবার এবং লম্বাসময় ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় একাধিক রোগী একই সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে সরঞ্জামগুলো সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা জানতে হবে এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে তা করতে হবে।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়: কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো কিছু ব্যায়াম বা পদ্ধতি সবার জানা উচিত। কোভিড-১৯ রোগীদের উচিত হবে বুকের ভরে শোওয়া। অর্থাৎ উপুর হয়ে। ঘাড়ের বা গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত ও হাঁটুর নিচে থেকে দুই পায়ের ফাঁকে বালিশ থাকতে হবে। একপাশ হয়ে শুলেও উপকার পাওয়া যায়। পুষ্টিকর খাবার তো খাবেই, জোর দিতে হবে লৌহ বেশি এমন খাবারে। চিকিৎসকরা বলেন, শ্বাসতন্ত্রের যেকোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পেটের ভরে যত বেশি সময় শুয়ে থাকবে ততই ভালো।
হাসপাতালে নিতে হবে এমন লক্ষণ: কোভিড-১৯ এমনই রোগ, যেকোনো সময় রোগীর অবস্থা দ্রুত লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই ঘরে কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে নিশ্চিন্ত হওয়া চলবে না। রোগীর ঠোঁট, চেহারা, জিহ্বার রং নীলচে বা অস্বাভাবিক বর্ণ ধারণ করতে দেখলে বুঝতে হবে অবস্থার অবনতি হচ্ছে দ্রুত। রোগী জ্ঞান হারানো এবং জ্ঞান না ফেরা ভয়ঙ্কর লক্ষণ। আবার কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়ার পরও যদি রোগীর অস্বস্তি না কাটে তবে বুঝতে হবে অক্সিজেনে উপকার হচ্ছে না। অন্যান্য উপসর্গ কিংবা ‘ভাইটাল সাইন’গুলোর অবনতি হতে থাকলেও বুঝতে হবে খবর ভালো না। তখন অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।