আগুনে পুড়ে যাওয়া নগরীর বায়েজিদ থানাধীন জালালাবাদ এলাকার প্রিমিয়ার এক্সেসরিজ লিমিটেডের নামে ইস্যু করা ফায়ার প্রতিবেদন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর আগুন লাগার আগে বন্ডেড প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের রেজিস্টার অনুযায়ী ৪৪৩ টন পণ্য ছিল বলে জানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। যদিও পুড়ে যাওয়া ওই ওয়্যারহাউজের পণ্য রাখার অনুমোদন ছিল ১৮৬ টনের। অর্থাৎ রেজিস্টার মতে, সেই সময় ২৫৭ টন পণ্য অতিরিক্ত ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কে এইচ লতিফুর রহমান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দপ্তরে আবেদনের সময় তার কারখানায় ৬৯৫ টন কাঁচামাল, তৈরি এবং অর্ধতৈরি পণ্য ছিল বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া মেশিনারিজ ও অবকাঠামোগত ক্ষতিও দেখানো হয়েছে সেই আবেদনে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত পহেলা এপ্রিল ফায়ার সার্ভিস ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিআইসি (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটও পৃথকভাবে তদন্ত করছে। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগুনে প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৫ লাখ টাকা এবং মেশিনারিজের ক্ষতি হয় ২৫ টাকা। এছাড়া ৫০৫ টন কাঁচামাল পুড়ে ক্ষতি হয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ১৬৯ টন তৈরি পণ্য পুড়ে গিয়ে ক্ষতি ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং ২১ টন অর্ধ তৈরি পণ্য পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকার পণ্য পুড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়। ফায়ারের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আজিজুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর আমরা প্রতিষ্ঠানের মালিকের আবেদনের ভিত্তিতে আনুমানিক একটি ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন দিই। কারণ ওই ওয়্যারহাউজে কি পরিমাণ পণ্য ছিল, সেটি আমরা বলতে পারি না। কারণ প্রায় পণ্যই তো পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এ ব্যাপার জানার জন্য কে এইচ লতিফুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। বন্ড কাস্টমস সূত্র জানায়, আগুনে পোড়ার আগে রেজিস্টার অনুযায়ী প্রিমিয়ার এঙেসরিজ লিমিটেডের ওয়্যারহাউসে পলিয়েস্টার ইয়ার্ন, কটন ইয়ার্ন এবং ডুপ্লেক্স বোর্ডের পরিমাণই বেশি ছিল। এক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউসটিতে ১৮৬ টন পণ্য অনুমোদন থাকলেও রেজিস্টার অনুযায়ী সেখানে ৪৪৩ টন পণ্য ছিল। আগুনে পোড়ার দুই মাসের মধ্যে প্রিমিয়ার এঙেসরিজের মালিক ৭৫টি ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন) নেন। সেগুলোর বিষয়েও এনবিআরের সিআইসি তদন্ত করছে। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইসির মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রিমিয়ার এক্সেসরিজের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। এটি এখনো চলমান রয়েছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি এনবিআরের সিআইসি, শুল্ক গোয়েন্দা এবং আমাদের টিম তদন্ত করছে। আমরা ফায়ার প্রতিবেদন ইতোমধ্যে পেয়েছি। এখন ইন্সুরেন্সের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। ওয়্যারহাউজে অনুমোদনের অতিরিক্ত পণ্য থাকা এবং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইউপি নেয়ায় এখনো কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এনবিআর সরাসরি তদারকি করছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।










