বহুল প্রত্যাশার পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালকে কার্যকর করার জন্য দফায় দফায় উদ্যোগ নেয়া হলেও সবই ভুন্ডুল হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি খরচের কারণে আমদানি রপ্তানিকারকদের অনাগ্রহের ফলে নির্মাণের আটবছর পরও গতি পেলো না এই টার্মিনাল। ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রচুর খরচসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তারা ইচ্ছে করলেও পানগাঁও টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারছেন না। আবার এমএলওর বাড়তি চার্জ, রেল ভাড়ার চেয়ে জাহাজ ভাড়া বেশিসহ বিভিন্ন কারনে পানগাঁও টার্মিনালের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএর জায়গার উপরে ২০১৩ সালে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এই টার্মিনালে নৌপথে নিয়মিত কন্টেনার আনা নেয়ার কথা ছিল। যা সড়ক এবং রেলওয়ের উপর চাপ কমাবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য আনা নেয়ায় ব্যবসায়ীদের সময় এবং খরচ কমানোও এই টার্মিনাল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য এখনও অর্জিত হয়নি।
পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার বুকিংয়ের ক্ষেত্রে মেইন লাইন অপারেটরেরা অত্যধিক ভাড়া আদায় করার ফলে এই টার্নিনাল ব্যবহারে আগ্রহ হারান বন্দর ব্যবহারকারীরা। বিশেষ করে পণ্য পরিবহনের দীর্ঘসময় এবং অতিরিক্ত খরচের জন্যই কার্যত টার্মিনালটি দিনে দিনে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে।
পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনালের ৫৫ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ডের প্রায় পুরোটাই ফাঁকা পরে থাকে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, যন্ত্রপাতিগুলোও অব্যবহৃত পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৩ হাজার ৫শ টিইইউএস কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই বন্দরে মোবাইল হারবার ক্রেন, স্ট্রাডেলক্যরিয়ার, এম্পটি হ্যান্ডলারসহ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট রয়েছে।
খরচ কমানো প্রসঙ্গে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্দর ট্যারিফ বহু কমিয়েছে। কিন্তু কিছু খরচ আছে যেগুলোতে বন্দরের কোন হাত নেই। শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডারসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার সে খরচ নিয়ে থাকে। এসব খরচ কমানো গেলে পানগাঁও টার্মিনাল গতি পেতো বলেও তারা মন্তব্য করেন। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, পানগাঁও থেকে যেহেতু রপ্তানি খুবই কম, তাই এজেন্ট এবং এলএলওগণ পানগাঁওগামী আমদানি কন্টেনারের ভাড়া নির্ধারণের সময় রিটার্ণ এম্পটি ভাড়া যোগ করে নির্ধারণ করেন। ফলে পানগাঁওয়ে হ্যান্ডলিংকৃত কন্টেনারের ভাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় অত্যাধিক হয়ে পড়ে।
আবার পানগাঁওগামী কন্টেনারের জাহাজভাড়াও বেশি। এটিকে আইসিডিগামী রেলভাড়ার সাথে সমন্বয় করা সম্ভব হলেই কেবল পানগাঁওর ব্যবহার বাড়বে।
পানগাঁওমুখী যানবাহনের উপর পোস্তগোলা সেতুর টোল প্রতিটি রপ্তানি কন্টেনারের ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকা এবং প্রতিটি আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক ও ট্রেইলারের ক্ষেত্রে দেড় হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। যা আমদানি রপ্তানিকারকদের পানগাঁও টার্মিনাল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে পানগাঁও টার্মিনালের কন্টেনার পরিবহনে গতিশীলতা শুধু ব্যবসা বানিজ্য বা বন্দরের স্বার্থেই জরুরি নয়, এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং গতিশীলতার জন্যও জরুরি। চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পানগাঁও চালু করার নানা আয়োজন ছিল। সরকার জরুরিভাবে চাইলে সব আয়োজনই গতি পাবে।