প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান বাহিনীর হাতে আর্মেনীয় হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ বা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন জো বাইডেন। ১৯১৫ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের পড়ন্ত সময়ের ওই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের ‘জেনোসাইড’ আখ্যা দেওয়া এটাই প্রথম বলে বিবিসি জানিয়েছে। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ১০৬ বছর আগের ‘গণহত্যায় নিহত আর্মেনীয়দের’ সম্মান করে আমেরিকার জনগণ। খবর বিডিনিউজের।
ঐতিহাসিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সামরিক জোট-নেটোর সদস্য তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপড়েনের সম্পর্ক আরও চাপের মধ্যে পড়ল। বাইডেন বলেন, আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই, তাদের ব্যথা অনুভব করি। তাদের ইতিহাসকে স্বীকার করি। এসব আমরা দোষারোপের জন্য নয়, যা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য করছি। ঐতিহাসিকভাবে স্পর্শকাতর ওই ঘটনার নৃশংসতার কথা স্বীকার করলেও সেটাকে ‘জোনোসাইড’ মানতে নারাজ তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্তকে ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান’ করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওগলু এক টুইটে বলেন, আমাদের ইতিহাসের বিষয়ে অন্য কারোর সবক আমরা নেব না। ঘটনার বিষয়ে ‘কঠোর প্রতিক্রিয়া’ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নেটো সদস্য হিসেবে মিত্র তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনাটিকে ‘জেনোসাইড’ বলেনি। যুক্তরাষ্ট্রে আর্মেনীয়দের সবচেয়ে বড় আবাসস্থল ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানই কেবল এর আগে জনসমক্ষে সেটাকে ‘জেনোসাইড’ বলতেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। কিন্তু জো বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসেই তুরস্কের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চকণ্ঠ। সেসঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়েও তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে আছে। আর্মেনীয় হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা অভিহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে টেলিফোনে আলাপের বিষয়টিও শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। উত্তেজনাপূর্ণ এই সম্পর্কের মধ্যেই আগামী জুনেই ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় নেটো সম্মেলনে পার্শ্ব বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট।