রোজা শব্দটি ফার্সি। আরবি প্রতিশব্দ সওম ও সিয়াম। আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত সময় পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার ও যৌন-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে।
মাহবুবে খোদা, তাজেদারে মদিনা ছরকারে দো আলম, নূরে মোজাচ্ছম, হযরত মুহম্মদ (দ.) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের মধ্যে আশুরার রোজা পালন করতে দেখে মুসলমানদেরকে উক্ত দিনের সাথে আরো একদিন বৃদ্ধি করে রোজা রাখার নির্দেশ দেন। হিজরতের আঠার মাস পর শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশ সম্বলিত কোরআনের আয়াত নাজিল হয়। তখন থেকে আশুরার রোজা পালনের অপরিহার্যতা নাকচ হয়ে যায়। পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। তাই মানুষের উপর আল্লাহ পাক ত্রিশ রোজা ফরজ করেছেন। ফেরেশতাদের মধ্যে সৃষ্টিকুলের স্বভাবের অভাব থাকায় আল্লাহর প্রদত্ত খিলাফতের দায়িত্ব পাননি। কিন্তু জাগতিক গুণাবলী বেশি শক্তিশালী হলে ভারসাম্য লোপ পায়। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। পাশব প্রবৃত্তি অধিক মাত্রায় ভোগ-বিলাসে শক্তিশালী হয়ে উঠে। আল্লাহ পাক সিয়ামের বিধান দিয়েছেন যাতে পাশব প্রবৃত্তিকে দমন করে তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে ভারসাম্যতা অর্জন করতে পারে।
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ঈমাম গাজ্জালী (র.) বলেছেন, ‘আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করে তোলাই হচ্ছে সিয়ামের উদ্দেশ্য। আল্লাহর ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ভোগ-বিলাস নেই, আল্লাহর বান্দা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়ে তাঁর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয় এবং আল্লাহপাক তাদের ভালবাসেন। তাই কিয়ামতের কঠিন দিনে রোজাদারের মুক্তির জন্য রোজা ও তাঁর পবিত্র কালাম আল কোরআন সুপারিশ করবে। রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (দ.) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন রোজা বলবে, হে প্রভু! আমি এই ব্যক্তিকে দিনের বেলায় আহার ও কামনা বাসনা হতে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল কোরআন বলবে, আমি রাতে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছিলাম। অতএব, তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল্লাহ পাক তাঁদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন। সোবহান আল্লাহ।