চট্টগ্রামের সব মার্কেট-শপিংমল আগামী ২২ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মিলিত ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যানারে ব্যবসায়ীরা এই সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান বলেন, গত বছরের ২৫ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে। সেই সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সরকারি সিদ্ধান্তকে যথাযথ সম্মান করে চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখেছিল। তখন থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে আসে চরম দুর্দশা। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮ মে সীমিত আকারে দোকান-পাট খুলে দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা থেকে বিরত ছিলো। যার ফলে পুরো রমজান মাসে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল ব্যবসায়ীরা। সে সময়ে আমরা চট্টগ্রামের সকল মার্কেটের ব্যবসায়ীগণ নিজ উদ্যোগে মার্কেটের সম্মুখে জীবাণুনাশক টানেল, স্প্রে মেশিন স্থাপন, সর্বদা মাস্ক পরিধানসহ নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ চেষ্টায় এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও করোনার ভ্যাকসিন আনায় গত কয়েকমাসে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে কমে এসেছিল। তবে এ বছরের মার্চ থেকে কারোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। করোনার এই উর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে আবার এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে ও গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করে। অনেকে উচ্চ সুদে লোন নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি প্রস্তুতি নিয়ে রাখে করে। প্রথম দফার লকডাউন চলাকালে ব্যবসায়ীরা সীমিত আকারে হলেও দোকান খোলা রাখার দাবিতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল সীমিত আকারে ৫ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার সুযোগ দেয়। তবে মৃত্যুহারের উর্ধ্বগতির কারণে সরকার দ্বিতীয় ধাপে গত ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়। কিন’ বাস্তবে আমরা দেখতে পেয়েছি, শিল্প, কলকারখানা, গার্মেন্টস, বাজার, ব্যাংক, বিমান চলাচল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কঠোর লকডাউনেও খোলা আছে। শুধুমাত্র মার্কেটসমূহ, দোকানপাট ও আন্ত:জেলা পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত পরামর্শক কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী কাঁচা বাজার, জনসমাগম যুক্ত স্থান, পর্যটন এলাকা, ধর্মীয় উপাসনালয় ইত্যাদি থেকে এই করোনাভাইরাস অতিমাত্রায় ছড়ায়, কোথাও বলা হয়নি যে, শুধুমাত্র মার্কেট বা দোকান থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কলকারখানা, কাঁচা বাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে পারে, তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান ও ঈদের সময় মার্কেট ও দোকানপাট কেন খোলা থাকতে পারবে না? সরকারের এই সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীগণ দিশেহারা হয়ে আত্নাহুতির পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারা স্বত্বেও ব্যবসায়ীরা সরকারি ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাঙসহ যাবতীয় সকল ফি প্রদান করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। অথচ এই লকডাউনের কারণে যদি এ বছরও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারে, তাহলে তারা তাদের পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচশতাধিক মার্কেটের ৩০ হাজারেরও বেশি দোকানের সাথে জড়িত রয়েছে দুই লাখের বেশি কর্মচারী। তাদের মার্চ, এপ্রিল, মে মাসের বেতন ও ঈদের বোনাসসহ দিতে হবে। এছাড়া দোকান ভাড়া, গোডাউন ভাড়া, ইলেক্ট্রিসিটি বিলসহ নানাবিধ খরচ রয়েছে। যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে এই খরচগুলো তারা কিভাবে চালাবে, নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবে? এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীগণ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিবে, কর্মচারীরা তাদের চাকুরি হারাবে। ফলে তাদের নৈতিক স্খলন ঘটে সমাজে নানাবিধ অনাচার সৃষ্টি করে দেশকে অসি’তিশীল করে ফেলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তাই আমাদের দাবি হলো-চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবিকার স্বার্থে স্বাভাবিক নিয়মে মার্কেটসমূহ খুলে দেয়া হোক। দোকান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট খরচ ও কর্মচারী, শ্রমিকদের বেতন বোনাস বাবদ খরচ নির্বাহের জন্য ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রণোদনা, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া, দোকান মালিক কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা এবং করোনাকালীন ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সরকারি বিভিন্ন ফি মওকুফ ও অতিরিক্ত ফি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থি ছিলেন তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবু তালেব, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল হক, তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম ডেকোরেটার্স মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন, বিপনী বিতান মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাগির, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশিদ আলম, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমদ, তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।











