বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা এখন চট্টগ্রামে

এভারকেয়ার হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের প্রসিদ্ধতম বন্দরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। খ্রিস্ট-পূর্ব ৪০০ বছর আগেও চট্টগ্রামকে সমুদ্রযাত্রার জন্য বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ বন্দরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নগর। এই নগরে বর্তমানে ৬০ লাখের অধিক মানুষ বাস। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসাসেবা অন্যতম। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার কেমন হাল মহামারী করোনাকালীন সবাই জানে। তবে সরকারের একার পক্ষে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রতি বছর উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের কতো মানুষ দেশের বাইরে যায়, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সে সাথে চলে যায় হাজার কোটি টাকারও বেশি দেশের বাইরে। অথচ বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা চট্টগ্রামে গড়ে উঠলে দেশের টাকা বাইরে যেত না।
উন্নত স্বাস্থ্যসবা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করেছে এভারকেয়ার গ্রুপ। বন্দরনগরীর সকল স্তরের মানুষের জন্য দেশের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রত্যয়ে নির্মিত হয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল বিদেশি হাসপাতালগুলো। যার ফলে যাতায়াতকালীন সময়, অর্থ, শক্তি সবই খরচ হতো লক্ষ্যণীয়ভাবে। তবে, দেশের মধ্যেই বিশ্বমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বিদেশমুখো মানুষগুলোর আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এভারকেয়ার হাসপাতাল।
বিভিন্ন দেশে রয়েছে এভারকেয়ার গ্রুপের কার্যক্রম। রাজধানী ঢাকায় অনেক আগেই চালু হয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে আরও বৃহৎ পরিসরে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের এভারকেয়ার হাসপাতাল। নগরীর অঙিজেন-কুয়াইশ সংলগ্ন সিডিএ অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৪ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল আয়তনের ১৪ তলা এই হাসপাতাল ভবন। পুরোদমে চালু হয়েছে ৪৭০ শয্যার এভারকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রাম। বিশাল পরিসরে সাজানো হয়েছে ভবনটি। এছাড়াও সীমানা দেওয়াল, প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিকমানের লিফট সার্ভিস ও এসি। এ হাসপাতাল চালু হওয়ায় শুধু চট্টগ্রাম নয়, কক্সবাজার, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ আশপাশের জেলার মানুষকে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য আর ঢাকা বা দেশের বাইরে যেতে হবে না। এভারকেয়ার গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৩০ টি হাসপাতালের বিশাল গ্লোবাল চেইন। এভারকেয়ার হলো একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্লাটফর্ম, আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার পোর্টফোলিওতে রয়েছে বিশ্বজুড়ে হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে ৩০ টি হাসপাতাল যার রয়েছে সর্বমোট ৩,৪৪৫ শয্যা ব্যবস্থা, ১৬ টি ক্লিনিক, ৮২ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এভারকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রামে হৃদরোগীদের উন্নত চিকিৎসায় রয়েছে দুটি ক্যাথল্যাব। আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাতেও রয়েছে সেন্ট্রাল অঙিজেন সুবিধা। আরেকটি বিশেষত্ব হলো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহের পর তা নিয়ে একটি বিশেষ যন্ত্রে প্রবেশ করিয়ে দিলেই সেটি সরাসরি পৌঁছে যাবে ল্যাবে। স্যাম্পল নিয়ে ছুটোছুটির প্রয়োজন পড়বে না। কেবিনে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্যও থাকছে বিশেষ সুবিধা। কেবিনে লাগানো ট্রেনের শিকলের আদলে একটি চেইন টান দিলেই পৌঁছে যাবেন নার্সরা। ডাকাডাকির প্রয়োজন পড়বে না।
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক ডা. ফজলে আকবর বলেন, ‘এভারকেয়ার বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও সব সুবিধা ও আয়োজনের মাধ্যমে শীর্ষমানের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের স্বাস্থ্য খাত পরিবর্তন করে মানুষের আস্থা অর্জনে পথ সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করবে এই হাসপাতাল।’
হাসপাতালের প্রকিউরমেন্টকে দক্ষ থেকে দক্ষতর করা এবং অপারেশন আরও উন্নত করার পাশাপাশি কার্ডিয়াক সার্ভিসেস, লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং অনকোলজির মতো সুপার স্পেশালটি ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সামর্থ্য আরও বাড়াতে চায় কর্তৃপক্ষ। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট, সব ধরনের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে এই এভারকেয়ার হাসপাতাল। এখানে প্রত্যেক রোগীর সাধ্যের মধ্যে অত্যাধুনিক সুবিধা ব্যবহার করে দক্ষ মেডিকেল স্টাফ দ্বারা সাশ্রয়ী খরচে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যাবে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, সংক্ষেপে বিএমটি বা বিএমটি অটোলেগাস ও অ্যালোজেনিক এই দুই ধরনের। বিএমটি করার ঠিক পূর্বক্ষণে রোগীর দেহে উচ্চমাত্রার কেমো বা রেডিওথেরাপি বা দুটোই একসাথে ব্যবহার করা হয়- যার মাধ্যমে রোগীর দেহে অবশিষ্ট সব ক্যান্সার কোষ মারা যায় এবং বোন ম্যারোতে ডোনার স্টেম সেলের জন্য উপযুক্ত জায়গা তৈরি হয়। ডোনার স্টেম সেল রক্তের শিরার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয়। তা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে এবং রোগীকে একটি নতুন জীবন দান করে। এখানেও গড়ে তোলা হয়েছে বিএমটি ইউনিট। কেমোথেরাপির পাশাপাশি টোটাল বডি রেডিয়েশন যা টিবিআই সংযোজনের মাধ্যমে হাসপাতালে সব ধরনের বিএমটি করার সক্ষমতা রয়েছে। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়ার জন্য অ্যালোজেনিক বিএমটি পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্যও সুযোগ সৃষ্টি করবে। হাসপাতালে উন্নতমানের ফ্লোসিটোমেট্রি, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি, পিইটি স্ক্যান, প্লাজমা এঙচেঞ্জ ও আধুনিক ব্লাাড ব্যাংক সেবাও রয়েছে। এই চিকিৎসাগুলো বাংলাদেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোর খরচের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এখন দেশের বাইরে না গিয়েই হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত যেকোনো রোগী এই আধুনিক চিকিৎসাসেবা সুবিধা পাবেন। আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এভারকেয়ার একমাত্র জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল।
এভারকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রামের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) নীলেশ গুপ্ত বলেন, ‘গ্লোবাল হেলথকেয়ার গ্রুপের অংশ হওয়ায় এখানে ক্লিনিক্যাল ও অপারেশনাল নৈপুণ্য ও দক্ষতার সব রকম সুবিধা পাওয়া যাবে, যা আমাদের রোগীর সুস্থতার হার বাড়াতে এবং একই সঙ্গে খরচ কমাতে ও সক্ষমতা বাড়াতে সব সময় সাহায্য করবে। সকল জটিল রোগীর জন্য এটি হবে আস্থার ঠিকানা। আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে আন্তর্জাতিক মানের এই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। নবজাতক ও প্রসূতির জন্য আধুনিক সব সুবিধা। ১৫-২০ বছর আগেও যা সম্ভব ছিল না, অ্যাডভান্সড নিউন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, অভিজ্ঞ নিউন্যাটোলজিস্ট টিম, কার্ডিয়াক মনিটরিং, আধুনিক প্রযুক্তি, যথাযথ সাপোর্ট এখানে থাকবে। সেরা চিকিৎসক, সাপোর্ট স্টাফ, প্রযুক্তি ও অন্যান্য সুবিধার সমন্বয়ে এভারকেয়ার চট্টগ্রাম নয় শুধু, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম পথিকৃৎ হবে। যার লক্ষ্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।’এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করবে বৈশ্বিক রূপ। এর মাধ্যমে রোগীরা নয়, চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবেন সন্দেহ নেই। বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা এখন চট্টগ্রামে পাওয়া যাবে।
এভারকেয়ার গ্রুপ সম্পর্কে : এভারকেয়ার গ্রুপ বিশ্বাস করে যে স্বাস্থ্যসেবা একটি মৌলিক অধিকার। উদীয়মান বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের চাহিদা পূরণে পাইভেট ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে উদীয়মান বাজারে বসবাসরত সকল বয়সের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে সাড়া দিয়েছে এভারকেয়ার। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবার ধারা পরিবর্তন ও রূপান্তরকরণের মাধ্যমে, ক্রস-কন্টিনেন্টস প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে তাদের উন্নত ও মানসম্মত মেডিকেল সেবা সরবরাহ করছে।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কেনিয়া এবং নাইজেরিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার উদীয়মান বাজারজুড়ে তাদের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এভারকেয়ার। ৩০ টি হাসপাতাল, ১৬ টি ক্লিনিক, ৮২ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ২ টি ব্রাউনফিল্ড অ্যাসেটস এই প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিওর অন্তর্ভুক্ত। দেশের উদীয়মান বাজারে একটি সিস্টেম্যাটিক স্বাস্থ্যসেবা তৈরি করতে প্রায় ১১ হাজার কর্মী নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। একটি বিচিত্র স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এভারকেয়ার গ্রুপ গর্বিত।
এভারকেয়ার হেলথ ফান্ডের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এভারকেয়ার, যা উদীয়মান বাজারে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য রাইজ ফান্ডস পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা তহবিল, যা বৈশ্বিক বিকল্প সম্পদ ব্যবস্থাপক টিপিজির প্রভাব বিনিয়োগের একটি প্ল্যাটফর্ম। এভারকেয়ার স্বাস্থ্য তহবিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবিত বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। আরো জানতে ভিজিট করুন www.evercarenbd.com এ।
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম সম্পর্কে : এভারকেয়ার হাসপাতাল-চট্টগ্রাম, বন্দরনগরীর সর্বপ্রথম ৪৭০ শয্যাবিশিষ্ট মাল্টি ডিসিপ্লিনারী সুপার-স্পেশিয়ালিটি টারশিয়ারি কেয়ার হাসপাতাল। এখানে থাকছে ২৪/৭ জরুরি বিভাগ, সর্বাধুনিক আইসিইউ সেবা এবং ২৭টি বিশেষ ও উপ-বিশেষ বিভাগ যা পুরো অঞ্চলের ধারণক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণে সক্ষম। ৪ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গফুট আয়তনের উপর নির্মিত হসপিটালটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ মেডিকেল সেবা ও ৫ শতাধিক মেডিকেল প্রফেশনালসদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের সকল স্তরের রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করবে। আরো জানতে ভিজিট করুন www.evercarenbd.com-এ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষার আগে নালা-নদর্মা আবর্জনামুক্ত করার জন্য কাজ করছি : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধমার্কেট-শপিংমল ২২ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়ার দাবি