লকডাউনে আটকে পড়াদের ফেরত পাঠাতে নির্ধারিত ১৪টি ফ্লাইটের মধ্যে অর্ধেক ফ্লাইট বাতিল করার খবরে চট্টগ্রামের প্রবাসীরা গতকাল সকাল থেকে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে তারা অবস্থান নিয়ে ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে দিনভর ভোগান্তি শেষে অবশেষে গতকাল রাতের মধ্যে বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটে উঠতে পারবেন সৌদি আরবগামী দুই শতাধিক যাত্রী। প্রবাসে নিজ কর্মস্থলে ফিরতে গতকাল সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে তাদের রিয়াদ যাওয়ার কথা ছিল। রিয়াদে ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে দেরি হওয়ায় তাদের সকালের যাত্রা বাতিল হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখান যাত্রীরা।
জানা গেছে, অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী সংকটের কারণে ৭টি বিশেষ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। অথচ গতকাল বিশেষ ফ্লাইট চালুর প্রথম দিনে মোট ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনার কথা জানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরে এসব ফ্লাইট চলাচলের কথা ছিল। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছিল ৫টি।
প্রবাসী যাত্রীদের অভিযোগ, বিদেশে ফিরতে তারা টিকিট কেটে রেখেছিলেন। এর মধ্যে ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। লকডাউনের মধ্যে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গ্রাম থেকে এসেছেন তারা। এখন এসে শুনছেন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তারা বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে এসেছেন। এখন বাড়ি চলে গেলে বিমান কবে চালু হবে সেই খবর পাওয়া যাবে না বলে জানান রাঙ্গুনিয়ার যাত্রী মো. সাইমুন। তার মতো অনিশ্চয়তায় আছেন ফটিকছড়ির তৈয়ব ও মাহমুদ, আনোয়ারার রেজাউল, সাতকানিয়ার ই্ব্রাহিমসহ শত শত যাত্রী।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, বিমান অফিসের পাশাপাশি অনেকেই ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করেন। ফ্লাইট বাতিল হলে আমরা মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি যাত্রী এবং ট্রাভেল এজেন্টদের জানিয়ে দিই। এখন ট্রাভেল এজেন্টরা খবরটি ঠিকমতো যাত্রীদের জানিয়ে না দিলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।
প্রবাসী যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের অনেকে সৌদি আরব, কাতার ও ওমানে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। এর মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষ হতে চলেছে। ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশে ঢুকতে না পারলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে, তারা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবেন।
বিডিনিউজ জানায়, রিয়াদে ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে দেরি হওয়ায় তাদের সকালের যাত্রা বাতিল হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। পরে উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমোদন পাওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় ও রাত তিনটার দিকে পৃথক ফ্লাইটে এসব যাত্রী নিজেদের গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশের জনসংযোগ শাখার উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার। তিনি গতকাল বিকেলে বলেন, কোনো দেশে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে সেই দেশের ল্যান্ডিং পারমিশন লাগে। করোনা পরিস্থতির মধ্যে বিমান সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দায় বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। জেদ্দায় বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানের ল্যান্ডিং পারমিশন নেওয়া ছিল। শনিবার দুপুরে রিয়াদ ও দাম্মামে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার ভোরে বিমানের যেসব যাত্রী রিয়াদে যেতে পারেননি তাদের একটি অংশকে সন্ধ্যায় বিমানের জেদ্দাগামী একটি ফ্লাইটে পাঠানো হবে। বাকি যাত্রীদের ভোর রাত ৩টার দিকে বিমানের রিয়াদগামী আরেকটি ফ্লাইটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাহেরা খন্দকার বলেন, রোববার থেকে আশা করা হচ্ছে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই বিমান নির্ধারিত গন্তব্যগুলোতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।
লকডাউনে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে গতকাল থেকে পাঁচ দেশের আট গন্তব্যে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান। এসব গন্তব্য হলো সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি, ওমানের রাজধানী মাস্কাট, কাতারের রাজধানী দোহা ও সিঙ্গাপুর। তবে গতকাল সকালে রিয়াদে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে বিলম্ব হওয়ায় সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে বিমানের রিয়াদগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
উড্ডয়নের আগে ফ্লাইট বাতিলের কথা জানানোর প্রতিবাদে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে রিয়াদগামী যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর বিমান ওই ফ্লাইটে ২০১ জন যাত্রীকে হোটেলে রাখার উদ্যোগ নিয়ে পরে তাদের অন্য ফ্লাইটে রিয়াদে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।