১. হেফাজতে ইসলাম নামে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠনটি অত্যন্ত রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা ওয়াহাবি মতবাদী ও দেওবন্দী মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি ২০১৩ সালে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট করে সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল। সাধারণ মানুষের কাছে ওয়াহাবি হিসেবে পরিচিত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে পরে এক প্রকার সমঝোতা তৈরি হয়েছিল সরকারের। ঢাকায় মহাসমাবেশ করে সেখানে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করেছিল এবং তাঁকে ‘কওমি মাতা’ অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ সাংঘর্ষিক হলেও দল ও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অবস্থানকে রাজনৈতিক কৌশল বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা নিয়ে হেফাজতেও বিভক্তি তৈরি হয়। সদ্য প্রয়াত আমির মাওলানা শফীর নেতৃত্বের অংশ বর্তমানে সরকারের প্রতি নমনীয় হলেও জামায়াত ও বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট বর্তমান আমির বাবুনগরীর নেতৃত্বের অংশ আরও বেশি কট্টর ও সরকারবিরোধী। এরাই এখন হেফাজতে মজবুত অবস্থানে আছে। হেফাজতের এই অংশটিই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, এই নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের কারণে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবং প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদও নষ্ট হয়েছে।
হেফাজতের এমন আচরণ নতুন নয়। গত কয়েক বছরে দেশের বহু স্থানে তারা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।
গত বছর ১৫ নভেম্বর খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে তা অপসারণের দাবি তুলে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। মামুনুল হকের পিতা আজিজুল হক ছিলেন নেজামে ইসলামের অন্যতম নেতা, যে দলটি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা ও ধর্মভিত্তিক সামপ্রদায়িক রাজনীতির কারণে জামায়াত ইসলামীসহ নেজামে ইসলামীকে বঙ্গবন্ধু সরকার বাংলাদেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
২. স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার আরও বেশ কয়েকজন সরকার প্রধানের সঙ্গে ভারতের সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম যেমন মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, ভুটান ও নেপালের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশ সফর করে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে গৌরবদীপ্ত করেছেন। আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সরকার প্রধানকেও একইভাবে উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ভারতকে শুধু প্রতিবেশী বা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র বললেই শেষ হবে না। একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ, অকৃত্রিম ও শর্তহীন সহযোগিতার কারণে দেশটির প্রতি অপ্রতিরোধ্য ঋণে আবদ্ধ হয়ে আছি আমরা। যে দেশের সহযোগিতায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, যে দেশটি অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল, এক কোটি শরণার্থীকে দীর্ঘ নয় মাসের অধিক সময় ধরে আশ্রয় দিয়েছিল। দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে যে দেশের সহস্রাধিক সৈন্য শহীদ হয়েছিল সে দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ না জানালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব অসম্পূর্ণ থেকে যায় এ কথা বোঝার জন্য গবেষক হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বলতে গিয়ে ভারতের দালালও হতে হবে না। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সে কৃতজ্ঞতাবোধেরই পরিচয় দিয়েছে। একজন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীও বোঝে এক্ষেত্রে ব্যক্তি নয় পদকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির স্থলে অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের পক্ষ থেকে তিনিই আসতেন।
নরেন্দ্র মোদি কোন রাজনৈতিক দল করেন তা দেখার বেশি সুযোগ নেই বাংলাদেশের। যেহেতু তিনি ভারতের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সেহেতু তিনি ভারত সরকার ও জনগণেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিজেপি এবং সে দলের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দল এবং সরকার হিসেবে একমত হওয়ার সুযোগ নেই। বিজেপির রাজনীতি সামপ্রদায়িক, আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং বর্তমান সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অসামপ্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ। এক্ষেত্রে ভারতের কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বরং সামপ্রদায়িক ও মৌলবাদী দল বিজেপির সঙ্গে সদ্ভাব থাকার কথা বিএনপি -জামায়াত-হেফাজতের মতো সামপ্রদায়িক দলগুলোর সঙ্গে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান প্রশংসাযোগ্য। এই অবদান ও কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। দূরদর্শী কূটনৈতিক নেতৃত্বের গুণে দক্ষিণপন্থী বর্তমান ভারতীয় সরকারকে বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে অভ্যস্ত করেছেন শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর মতো একজন সেক্যুলার নেতাকে মূল্যায়ন করে লিখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। শুধু তাই নয় একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করা সত্ত্বেও মোদি এবং তার সরকার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রবক্তা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
৩. নরেন্দ্র মোদি ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলের নেতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি যে সংকটের মধ্যে পড়েছে তা-ও বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ভারতের সামপ্রদায়িক দলগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সামপ্রদায়িক দলগুলোর মধ্যে বড় একটি পার্থক্য আছে। ভারতের সামপ্রদায়িক বা মৌলবাদী দলগুলো রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয় নিয়ে দ্বিমত করে না। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তাদের নিজস্ব কিছু মত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও ভারতের জাতির পিতা, ভারতের ইতিহাস-সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর ব্যবধান নেই। বাংলাদেশে যেমন বিএনপি-জামায়াত বা সামপ্রদায়িক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য থেকে সংবিধানের অনেককিছু পাল্টে দেওয়া হয় তেমন ঘটনা ভারতে ঘটে না।
ভারতে যদি ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় বা ভারত যদি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হয় তাতেও ভারতে বড় কোনো সংঘাত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটিও ভারতের একটি বৈশিষ্ট্য। সারা ভারতে সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দুরা সংখ্যাগুরু। একেক অঞ্চলে তারা একেকভাবে ধর্মীয় আচার পালন করে। একটি প্রদেশের লোকের সঙ্গে অন্য প্রদেশের লোকের ভাষা-সংস্কৃতি-চেহারা-খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ধর্মীয় আচারেও ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাদের একের সঙ্গে অন্যের বিরোধ নেই। বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অথচ সারা ভারতে বড় আয়োজন হয় কালীপূজা বা দিওয়ালিকে কেন্দ্র করে। কেউ করছেন গণেশ পূজা, কেউ করছেন শিবের পূজা এ নিয়ে বিতর্ক বা খুনোখুনি নেই। কিন্তু এর পাশাপাশি বাংলাদেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তা কোন মতাদর্শে চলবে তা নিয়েই চলবে নিষ্ঠুর খুনোখুনি। কারণ এদেশে ইসলামের নামে আছে অজস্র মতবাদ, এরা পরস্পরকে কাফের, মুরতাদ, বেদাত বলে আখ্যায়িত করে এবং এরা নিজেদের মত চাপিয়ে দিতে জিহাদের ডাক দিয়ে বসতে পারে।
৪। পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, ভারত ঝুঁকছে তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ভুলে গিয়ে হিন্দুত্ববাদীর দিকে, মায়ানমার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে একটি বৌদ্ধ রাষ্ট্র। সে সময়ে বাংলাদেশে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করছে ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে। দেশের প্রধানমন্ত্রী সর্বত্রই বলছেন, রাষ্ট্রটি সবার। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব লিঙ্গের। তিনি প্রতিদিন বলছেন, জঙ্গিবাদকে ঠেকাতে, মৌলবাদকে ঠেকাতে এবং দেশকে সব মানুষের বাস উপযোগী করে গড়ে তুলতে একটি অসামপ্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ করতে।
প্রশংসাকৃপণ, অকৃতজ্ঞ অনেক বাঙালির কাছে বিষয়টির কোনো মূল্য না থাকলেও একদিন ইতিহাসে শেখ হাসিনার এই অসাধারণ সাহস, প্রজ্ঞা আর মানবিক আচরণের কথা লেখা থাকবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে। তাঁর পিতা রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু গত শতকের চার দশকের অধিকাংশ সময়ে ভারত জুড়ে সামপ্রদায়িক দাঙ্গার নিষ্ঠুরতা, ভয়াবহতা, হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ প্রত্যক্ষ করেছেন। ফলে তিনি এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে দেশটি হবে সব মানুষের। সব ধর্মের। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা ও ব্যাখ্যার সঙ্গে তাঁর নিজের ব্যাখ্যা ও ধারণাও যোগ করেছিলেন। ফলে তিনি ধর্মের প্রতি বিধি নিষেধ আরোপ না করে রাষ্ট্র ও সমাজকেই সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহনশীল ও রাষ্ট্রের কাছে সমান গুরুত্বশীল করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ভারতের পাশাপাশি আজ বাংলাদেশেও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ভারতে পড়েছে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের কারণে আর বাংলাদেশ পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি’র নেতৃত্বে সামপ্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির কারণে। স্পষ্টভাষায় বলতে গেলে বাংলাদেশে জাতির জনককে হত্যা করে যে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তি এদেশে ধর্মভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করেছিল, যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বেনিফিশিয়ারি, যারা মূলত ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করেছিল সেই বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্র এবং মুখে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও প্রগতিশীলতার কথা বললেও চরিত্রে একেবারে সামপ্রদায়িক তথাকথিত কিছু বামদল এবং মানবাধিকারের প্রবক্তারা। যশোরে উদীচীর সমাবেশে বোমা হামলা হলো, ‘ওরা’ বলেছিল কাজটি আওয়ামী লীগ করেছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হলো, ‘ওরা’ বলেছিল আওয়ামী লীগ করেছে।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা হলো, ক্ষমতাসীন বিএনপি -জামায়াত বলেছিল, শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে সমাবেশস্থলে বোমা নিয়ে গিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর ‘ওরা’ বলেছিল, বিচারের নামে প্রহসন হবে। যখন সত্যি বিচার হলো এবং বিচারে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো তখনও ‘ওরা’ বলেছিল, আসলে সালাহউদ্দিন কাদেরকে কিছু করতে পারবে না। সাকার ফাঁসি হওয়ার পরও ‘ওরা’ বলেছিল, ফাঁসি দেওয়া হয়নি, তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারদের মতো শত শত নেতাকর্মীর হত্যার কথা আর নাইবা বললাম।
এই ‘ওরা’ কোনো ছুঁতো পেলেই সরকারকে ফেলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। ৫ মে শাপলা চত্বরে ঘটিবাটি নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল হেফাজতিদের পদসেবা করার উদ্দেশ্যে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে ‘ওরা’। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতকে সহজে চেনা যায়। কিন্তু ওদের চেনা বড় মুশকিল। ‘ওরা’ মুখে ভীষণ উদার ও অসামপ্রদায়িক। কিন্তু বাস্তবে জামায়াত-হেফাজতিদের চেয়েও বহুগুণ খারাপ। এই তথাকথিত প্রগতিশীলদের মুখোশটিও উন্মোচিত করা দরকার।
৫. মোদিবিরোধী মিছিল হতেই পারে যদিও পূর্বেই বলেছি, মোদি এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। যে ভারত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। ধরে নিলাম এরপরেও অনেকে ক্ষোভ জানাতেই পারেন। জানাচ্ছেনও। জানাক, তাতেও আপত্তি নেই। দেখলাম, তেমন একটি ‘অসামপ্রদায়িক’ মিছিলে একজন বলছেন, ‘শেষ রক্তবিন্দু ঢেলে দেবেন’। তাতেও আপত্তি নেই। রক্ত থাকলে ঢেলে দিতেই পারেন। তবে শুধু আজকে ‘রক্তবিন্দু’ না ঢেলে এমন প্রতিবাদ মিছিল যদি তারা রামু, নাসিরনগর, শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের আগে-পরে করতেন, অথবা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চেয়ে, অথবা উস্কানিদাতাদের বিচার চেয়ে, অথবা ঘটনা সামাল দিতে না পারায় প্রশাসন তথা সরকারের নিন্দা জানিয়ে করতেন তাহলে বুঝতাম তাদের নিয়ত পরিষ্কার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ৫০ বছরে সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয়, অনুকরণীয় অগ্রগতিতে বাংলাদেশ যখন বিশ্বনেতাদের প্রশংসায় ভাসছে সে সময় একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যারা মনেপ্রাণে এদেশকে গ্রহণ করতে পারেনি তারা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে দেশের ঐতিহাসিক উদযাপনকে ম্লান করে দিয়েছে। গৌরবদীপ্ত বাঙালিদের উচিত এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানো এবং সমাজের সর্বক্ষেত্রে তাদের প্রতিহত করা।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক