চট্টগ্রাম থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের কষ্ট লাঘবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দুরত্ব মেনে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৫টি বুথে রেজিস্ট্রেশন ও দুটি বুথে নেয়া হচ্ছে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা। ২০২০ সালের ২০ জুলাই থেকে দুটি বুথে রেজিস্ট্রেশন ও একটি মাত্র বুথে নমুনা নেয়ার কারণে বিদেশগামীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো। কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক বিদেশগামী তাদের নমুনা দিচ্ছে। যারা এখানে এসে নমুনা দিতে একেবারে অপারগ তাদের ক্ষেত্রে সরকারী নির্দিষ্ট ফি জমা সাপেক্ষে বাসা-বাড়ি থেকে গিয়ে নমুনা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
বিদেশ যাত্রার ৭২ ঘন্টা আগে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্ধারিত বুথে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেটের ফটোকপি দেখিয়ে ১ হাজার ৫১৫ টাকা জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে পরদিন করোনার নমুনা দিতে হয়। যাদের কাছে বিএমইটির স্মার্ট কার্ড রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত নমুনা পরীক্ষার ফি মাত্র ৩০০ টাকা। নমুনাগুলো নির্ধারিত ল্যাবে পাঠানোর পর পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে বিদেশ যাত্রা নিশ্চিত করা হয়। গত জুলাই থেকে চলতি সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৮ মাসে মোট ১ লাখ ৫২ হাজার ৭২৫ জন বিদেশ গমনেচ্ছু করোনার নমুনা দিয়েছে। তন্মধ্যে কোভিড পজিটিভ হয়েছে ১ হাজার ৭৭৫ জন ও বিদেশ গমন করেছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫০ জন। বিদেশ যাত্রীদের সেবাখাতে মাত্র ২ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা। বিদেশগামীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা পরীক্ষার বুথ আরো বাড়ানোর পক্ষে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর অন্যান্য স্থানের ন্যায় চট্টগ্রামে প্রথমে সাধারণ জনগণের কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু হয়। সরকারের নির্দেশনায় ২০২০ সালের ২০ জুলাই থেকে বিদেশগামীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দু’টি বুথে রেজিস্ট্রেশন ও একটি বুথে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু করা হয়। বিদেশ গমনেচ্ছুদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন আরো ৩টি রেজিস্ট্রেশন বুথ ও চলতি সালের ১৬ মার্চ তারিখে নমুনা সংগ্রহের সুবিধার্থে আরো একটি বুথ উদ্বোধন করেন জেলা সিভিল সার্জন ও আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। ফলে বিদেশগামীরা মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ও ১০ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের নমুনা দিতে পারছে। সিভিল সার্জনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কর্মরত চিকিৎসক-কর্মচারীদের সহযোগিতায় বিদেশগামীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিছু কিছু এজেন্সি ভিত্তিক দালাল রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে বিদেশগামীসহ করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৬৬ জন, তন্মধ্যে মহানগরে ৩১ হাজার ৭৯৫ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ৮ হাজার ২০১ জন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মুত্যুবরণ করেছে ৩৮৬ জন, তন্মধ্যে মহানগরে ২৮৪ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ১০২ জন। বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে বিদেশ গমনেচ্ছুদের ভোগান্তি পোহাতে হবে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, প্রথম দিকে বিদেশগামীদের জন্য এ কার্যালয়ে দু’টি বুথে রেজিস্ট্রেশন ও একটি মাত্র বুথে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এতে করে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। বিদেশগমনেচ্ছুদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ভোগান্তি লাঘবে নতুন করে আরো তিনটি রেজিস্ট্রেশন বুথ ও একটি নমুনা সংগ্রহ বুথ করা হয়েছে। বর্তমানে ৫টি বুথে রেজিস্ট্রেশন ও ২টি বুথে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। যারা এখানে এসে নমুনা দিতে একেবারে অপারগ তাদের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দিষ্ট ফি জমা সাপেক্ষে বাসা-বাড়ি থেকে নমুনা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে আরও বুথ বাড়ানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।