: স্থান নির্ধারণে এখই সময় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র।
: ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের সুবর্ণ জয়ন্তী। পঞ্চাশ বছর আগে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে এই বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের মাধ্যমে এম.এ. হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৬ মার্চ দুপুরে (২.০৫ মিনিটে) স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন, ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় একই স্থান থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা প্রদান করেন। আজকের কথা স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয় নয়। কথা বলতে চাইছি এই ঐতিহাসিক বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার স্থান নিয়ে। সবাই বলেন এবং আমিও লিখেছি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র কালুরঘাট। কিন্তু সত্য হচ্ছে স্থানটি কিন্তু কালুরঘাট নয়, স্থানটি চান্দগাঁও। কালুরঘাট চান্দগাঁও থেকে অন্তত: ৬/৭ কিলোমিটার দূরে। বলা যায় বহদ্দারহাট থেকে চান্দগাঁও এর দূরত্ব মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। তাহলে আমরা কি বলবো বেতার কেন্দ্রের অবস্থান চান্দগাঁও? এটাই ঠিক। আমরা কেন কালুরঘাট বলছি? সেই পাকিস্তান আমলে চান্দগাঁও এর সাথে পাকিস্তান সরকারের কোন প্রশাসনিক ত্রুটি ছিলো কি? ইতিহাসের প্রয়োজনে সঠিক স্থানটি নির্ধারণ হওয়া উচিত। কারণ বেতার কেন্দ্রের একশ, দু’শ গজের মধ্যে সব এলাকার নাম, সাইন বোর্ডে অথবা মানুষ বলছে চান্দগাঁও। তাহলে চান্দগাঁর বদলে বলবো কি কালুরঘাট? করিম নামের ছেলেটিকে কি রহিম বলবো?
কেউ হয়তো বলতে পারেন এতোবছর পর এ প্রশ্ন তুলছেন কেন? প্রশ্ন নয় বরং বলতে হচ্ছে ইতিহাসে স্থানের মর্যাদা প্রদান করা। যাঁরা চান্দগাঁওবাসী তারাতো মর্মযন্ত্রনায় ভুগছেন। ইতিহাস বড় নির্মম, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। কালুরঘাটের মানুষ জানেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রটির অবস্থান কালুরঘাটে নয়, এর অবস্থান যেহেতু কালুরঘাটে নয় তাহলে কালুরঘাট কেন ব্যবহার হবে বা হচ্ছে। সচেতন মানুষতো যুক্তি মানবেন। অনাহুত তর্ক করবেন না। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নামটি কিন্তু কোন পূর্ব সিদ্ধান্তের ফসল নয়। আর কখনো স্থানের নামেও ঘোষণা করা হয়নি। এটা ছিলো ২৬ মার্চ সকাল ১১.৩০ থেকে যারা বেতার চালুর সাথে জড়িত ছিলেন সেসব আওয়ামী ও ছাত্রলীগের নেতাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। এই মানুষগুলো ছিলেন প্রত্যক্ষ সংগ্রামী এবং তাঁরা তখন স্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেননি। তখন তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিলো দেশের স্বাধীনতা, হানাদার নিধণের প্রস্তুতি এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী গণমানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। তারাতো সে সময় নিজের কথা বা নিজেদের কথা চিন্তা করার সুযোগ ছিলোনা। মরবেন কি বাঁচবেন সে চিন্তাও তাঁদের ছিলো না।
এখন আমরা ইতিহাসের সত্যটা প্রচারের চেষ্টা করছি। চান্দগাঁও এলাকার সচেতন মানুষদের অনেকে বলছেন আমরা বাড়ির আঙ্গিনায় অন্য গ্রামের নাম কেন, আমার বাড়ির আঙ্গিনায় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম স্থানটি অবস্থিত কিন্তু নিজের নামে ডাকতে পারিনা। অন্য নামে ডাকতে হয়। এটাতো এখন আমরা বলতে পারি, দাবি করতে পারি বা জেদও করতে পারি। এর কোনটিতো অপরাধ নয়। দেখুন প্রয়োজনে আমাদের সরকার রাজধানীর নামের বানান, চট্টগ্রামের বানান বদল করেছেন। এটাতো অপরাধ নয়। এখন আমরাতো বলতে পারি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের অবস্থান চান্দগাঁও-এ, পঞ্চাশ বছর পর বলছি ইতিহাসের জন্য, ইতিহাসের সত্য প্রকাশের জন্য। ধরুণ, এখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বিদেশী কোন কিশোর শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে বা প্রচার মাধ্যমে জানতে চায় তোমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রতো কালুরঘাটে অবস্থিত। আমাকে দেখাওতো স্থানটি লোকেশন। তখন দেখবে বা প্রশ্ন করবে গুগল বলছে স্থানটিতো কালুরঘাট থেকে অনেক দূরে, আর চান্দগাঁও এর মধ্যে অবস্থিত। তখন কি আমরা বলতে পারবো যে কালুরঘাট বা চান্দগাঁও একই অঞ্চল। অথবা চান্দগাঁওকে কালুরঘাট বলে। অথবা কালুরঘাটকে চান্দগাঁও বলে। এখন প্রায় সবাই বলেন সত্যটাই। ঐ এলাকায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মিনি বাংলাদেশ। পুরো বাংলাদেশকে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাহলে আমরা কি বলবো মিনি বাংলাদেশ কালুরঘাট। কারণ স্বাধীন বাংলা বেতারের অতি নিকটেই কিন্তু মিনি বাংলাদেশ অবস্থিত। সেখানে বড় করে লেখা রয়েছে চান্দগাঁও।
রাজনৈতিক কারণ ১৯৭২ থেকে প্রথম সরকারের কয়েকজন সমর্থক বা নেতারা এম.এ. হান্নানের অবদানকে স্বীকার করতে চাননি, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে এম.এ. হান্নানের সাহসী ঘোষণাকে লুকুতে চেয়েছিলেন, তখন সরকারের একটি বিশেষ মহল এম.এ. হান্নানের ঘোষণা আনুষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেননি। কারণ মৃত হান্নানও জেলা ও নগর আওয়ামী লিগের গ্রুপিং-এর শিকার। কিন্তু সত্য কি চাপা থাকে? ইতিহাসের প্রয়োজনে এম.এ. হান্নান এখন সবার মুখে মুখে। কারণ তাঁকে অস্বীকার করলে যে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা অকার্যকর হয়ে যায়। আরো কথা আছে ২৬ মার্চের প্রথম অধিবেশনের কথা শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ তো স্বীকার করেননি। তিনি সেদিনের বিকেলের অধিবেশনের কথা বলেছেন তাঁর বইতে। তাহলে প্রথম অধিবেশন, এম.এ. হান্নানের ষোঘণা কোথায় গেলো? ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আতাউর রহমান খান কায়সার, রাখাল চন্দ্র বণিকতো ইতিহাসের অংশ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের সূচনার কথাগুলো বাদ চলে যাবে। এটা কি ঠিক হবে এবং এটাও ইতিহাস বিকৃতির অংশ।
বেতার ইতিহাস মাটি ছিদ্্র করে বের হবেই। এখন বলছি, নিবেদন করছি কালুরঘাটের স্থলে চান্দগাঁও শব্দটি স্থাপন করুন। এই কথা সত্য প্রকাশের জন্য। আরো বলতে ইচ্ছা করছে কেন ২৮ মার্চ বেলাল মোহাম্মদরা ‘বিপ্লবী’ শব্দটি বাদ দিলেন। এটাও এখন গবেষণার অংশ। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থাকলে মুক্তিযুদ্ধের কোন ক্ষতি হতো কি? এসব প্রশ্নের মিমাংসা হওয়া উচিত। এখনই সময়।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।