টাকা দিয়েই রোহিঙ্গারা হয়ে যেত বাংলাদেশি। সহজে পেয়ে যেত বাংলাদেশি পাসপোর্টও। কক্সবাজারের এই ধরনের ২৫টি পাসপোর্টের সন্ধান পায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানকারী টিম। পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতায় মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পেয়ে যেত পাসপোর্ট। এই ২৫টি পাসপোর্টের অনিয়ম অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কক্সবাজারে একসময়ে কর্মরত ৫ পুলিশ কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাবেক ৭ জন কাউন্সিলর, ২ জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫৬ জনের নাম। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারাও রয়েছেন। এই ৫৬ জনের বিরুদ্ধে একদিনেই পৃথক ১২টি মামলা দায়ের করে দুদক। রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন, ভোটার তালিকাভুক্তি ও পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত, দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম এবং সহকারী উপ-পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রত্যেকে চারটি করে মামলা দায়ের করেন। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ গত ২৫ মার্চ বিকেলে মামলাগুলো রেকর্ড হয়। গতকাল ২৮ মার্চ ভোরে ওই মামলার এজাহারনামী ৪ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর দুদক গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়ে এসব তথ্য দেয়।
গ্রেপ্তার ৪ আসামি হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ মো. কায়সার নোবেল, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম এবং কক্সবাজার পৌরসভার কর্মচারী দিদারুল ইসলাম মুবিন। গ্রেপ্তারের পর দুপুরে কক্সবাজারের বিশেষ জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে আসামিদের হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে কক্সবাজারে অনেক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের লোকজন। এটি একটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ। পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা থেকে অবৈধ উপায়ে প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফাইলগুলো সঠিকভাবে তদন্ত না করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়েছেন। অনেকে বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশেও গিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়ার অভিযোগটি অনুসন্ধানে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির একজন সদস্য হয়ে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। অনুসন্ধানে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। কমিশনের অনুমোদন নিয়ে জড়িত ৫৬ জনের বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ পৃথক ১২টি মামলা হয়েছে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের মধ্যে রবিবার ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
দুদক সূত্র জানিয়েছে, একই ধরণের চট্টগ্রামে ১৫৪টি পাসপোর্টের বিষয়েও একই ধরণের অভিযোগের প্রমাণ পায় অনুসন্ধানকারী দল। এই বিষয়েও দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে এই পাসপোর্টগুলোর অনিয়মের বিষয়েও জড়িতদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। অন্যদিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে ৭০টি পাসপোর্ট পায় রোহিঙ্গা নাগরিকরা। ইতোমধ্যে তাদের ৫০ জনের মতো বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলোর বিষয়েও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মামলা দায়ের হতে পারে বলে জানিয়েছেন অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্যরা।