মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রতিবাদ বন্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড নিয়ে চড়াও হওয়ার পাশাপাশি গুলি ছুড়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশ ও সামরিক বাহিনীগুলো শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়ে প্রাণঘাতী শক্তি ও কম প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে তাতে- জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের পাওয়া বিশ্বাসযোগ্য তথ্য অনুযায়ী- অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন, বলেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর। গণমাধ্যমের পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েকজন লোককে ধরাধরি করে প্রতিবাদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাদের কয়েকজনের দেহ রক্তাক্ত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তারা কীভাবে আঘাত পেয়েছেন তা পরিষ্কার না হলেও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাজা গুলির কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার নাও গণমাধ্যম গোষ্ঠী জানিয়েছে, লোকজনকে ‘গুলি করা’ হচ্ছে, কিন্তু বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি তারা। ইয়াঙ্গনের বিভিন্ন অংশে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। বুকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে বলে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। মিজিমা গণমাধ্যমের চ্যানেলও এই মৃত্যুর কথা জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করছে এবং গুলি ছুড়ছে। শহরটিতে শিক্ষকদের একটি প্রতিবাদ স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় এখানে তিন নিউ য়ি নামের একজন নারী শিক্ষক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে ওই নারীর কন্যা ও তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন।
পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গনে অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করছে তাদের দপ্তর। পুলিশ ইয়াঙ্গন মেডিকেল স্কুলের সামনেও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে। এতে সেখানে অবস্থানরত সাদা এপ্রোন পরা চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এখান থেকে পুলিশ ৫০ জনেরও বেশি মেডিকেল কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে আন্দোলনকারী একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইয়েও পুলিশ গুলি করেছে। এখানে তিন জন নিহত ও বেশ কয়েকজনকে আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় রাজনীতিক কিয়াও মিন হটিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভ চলাকালে দুই জন নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে। বিকালে নিরাপত্তা বাহিনী আবার গুলি করলে এক নারী নিহত হন বলে মান্দালয়ের বাসিন্দা সাই তুন রয়টার্সকে জানিয়েছেন। মেডিকেল টিম তাকে পরীক্ষা করেছিল এবং তিনি বেঁচে নেই বলে নিশ্চিত করে। তার মাথায় গুলি লেগেছিল, বলেছেন সাই তুন। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর লাশিও এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মায়িকেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মিয়ানমার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে, টুইটারে বলেছেন বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো। এসব বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য পুলিশ ও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও কেউ সাড়া দেয়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।