লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর গভর্নর লায়ন ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই হোক ভাষা দিবসের অঙ্গীকার। এই দিবসের প্রকৃত অর্জন তখনি সম্ভব হবে যখন সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটবে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর কিংবা মহান একাত্তরের বীর সেনানীরা বুকের রক্ত দিয়েছিলেন এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যই। এই হাসি ফুটানোর মাধ্যমেই কেবল শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব। তিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাউজানের পাহাড়তলী মহামুনীতে অনিরুদ্ধ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলীর বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পড়ালেখায় আগ্রহী সুবিধা বঞ্চিত পরিবারের সন্তানদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি তারা যেন মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত স্বদেশ গড়ে তোলে সেদিকেও উজ্জীবিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এবং সাবেক লায়ন গভর্নর লায়ন এম এ মালেক বলেন, সমাজের অবহেলিত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া একক প্রচেষ্টায় যেভাবে ভূমিকা রাখছেন তা অতুলনীয়। তিনি বলেন, সমাজের বিত্তহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা যারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি তাদের উচিত পাশের মানুষটির দিকে হাত বাড়ানো। এটিই লায়নিজম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল পৃথিবীর দেশে দেশে এভাবে হাত বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, লায়নিজমের মূল মন্ত্রই হচ্ছে সেবা। যেখানেই প্রয়োজনই সেখানেই পৌঁছে যায় লায়নিজমের সেবা। লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া নিজের গ্রামে যেভাবে লায়নিজমকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা বহুবছরই শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হবে। রাউজানের পাহাড়তলী মহামুনিকে তিনি দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন বলে উল্লেখ করে বলেন, ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামটিকে এক অনন্য রূপ দিয়েছেন লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া। তিনি বলেন, লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়ার এলাকায় কোন সন্তানের টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হবে না। দেশের গ্রামে গ্রামে রূপম কিশোর বড়ুয়ার মতো মানুষের জন্ম হলে সমাজ অন্যরকম হয়ে যেতো।
লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়ার সন্তান অনিরুদ্ধ বড়ুয়ার আত্মার শান্তি কামনা করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, এক অনিরুদ্ধ সড়ক দুর্ঘটনায় লোকান্তরে, আজ হাজারো অনিরুদ্ধ রূপম কিশোর বড়ুয়ার অন্তরজুড়ে। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ওইদিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, ‘উর্দু অ্যান্ড উর্দু সেল বি দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুজ অব পাকিস্তান’-সেদিন সালাম রফিক জব্বার এবং বরকতেরা তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছিলেন ‘নো’। এই প্রতিবাদই আমার অস্তিত্ব, আমার অহংকার। তিনি দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক এবং কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য আমাদের এখানের সেবার দুয়ার উন্মুক্ত। কোন জাত পাতের বিচার লায়নিজমে নেই, আমাদের মাঝেও নেই। আমরা সবার তরে, সবার জন্য। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা মানুষের সেবা করতে চাই। মানুষের জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। তিনি অনিরুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শুধু শিক্ষাই নয়, সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজ করে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানুষকে ভালোবেসে মানুষের পাশে থেকে আমরা জীবন কাটাতে চাই। আমার এক সন্তান হারানোর কষ্ট আমি লক্ষ সন্তানের হাসিতে ভুলতে চাই।
রাউজানের মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিকিৎসা শিবির, ফ্রি ওষুধ বিতরণ ও শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের ফণী তটি মঞ্চে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল (জেলা ৩১৫-বি-৪) এর প্রাক্তন জেলা গভর্নর ও অনিরুদ্ধ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল (জেলা ৩১৫-বি-৪) এর প্রথম ভাইস গভর্নর লায়ন সাদত দোভাষ সাগর, দ্বিতীয় ভাইস গভর্নর লায়ন শেখ শামশুদ্দীন আহমেদ ছিদ্দিকী। সরোজ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য দেন, অনুপম মুৎসুদ্দী, শিক্ষক মলয় মুৎসুদ্দী ও মুহামুনি এ্যাংলো পালি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন কুমার বড়ুয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অনিরুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন সুপ্রভা বুড়য়া, লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি৪ এর কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন অশেষ কুমার উকিল, লায়ন্স ক্লাব চিটাগাং কর্ণফুলীর প্রেসিডেন্ট লায়ন শুভ নাজ জিনিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সড়ক দুঘর্টনায় নিহত অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অনি স্মরণে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারও রাউজানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্রছাত্রীর মাঝে বৃত্তি প্রদান করা হয়।