মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ছিটানো কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ওঠেছে। সম্প্রতি নগরজুড়ে মশার অস্বাভাবিক উৎপাত বৃদ্ধিতে জোরালো হয়েছে সে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে ছিটানো কীটনাশক কতটা ‘কার্যকর’ তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার পরিচ্ছন্ন বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে রাজধানীতে। তারা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ছিটানো কীটনাশকের সঙ্গে চট্টগ্রামে ছিটানো কীটনাশকের পার্থক্য চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন। অবশ্য গত জানুয়ারি মাসেই মশার লার্ভা নিধনকল্পে সময়োপযোগী কীটনাশক নির্বাচন ও কার্যকর প্রয়োগ সম্পর্কে চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোকে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি ঢাকায় পাঠাবো। ঢাকায় মশক নিধনের জন্য কি ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, কোন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করছে-তা সরেজমিনে দেখে আসবে ওই প্রতিনিধি দল। ওই ওষুধ কার্যকর হলে তা চট্টগ্রামে ব্যবহার করা হবে।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন মেয়র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বশেষ দুই বছর মশার কীটনাশক সংগ্রহ করেছিল চসিক। এর মধ্যে ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কীটনাশক সংগ্রহ করেছিল। ওই বছর একই প্রতিষ্ঠান থেকে কীটনাশক সংগ্রহ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও। সেবার রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ঢাকায় ছিটানো ওষুধ পরীক্ষা করে ‘অকার্যকর’ বলেছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি)। ফলে ঢাকায় ‘অকার্যকর’ ওষুধ চট্টগ্রামে কতটা কার্যকর সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক) সরবরাহে কার্যাদেশ দেয় চসিক। একই বছরের ১৪ মে কীটনাশক সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া কার্যাদেশের শর্ত ছিল সরবরাহকৃত লার্ভিসাইড অবশ্যই উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হতে হবে। মালামাল সরবরাহের পূর্বে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কীটতত্ত্ব বিভাগ থেকে পরীক্ষা করে রেজাল্ট উপস্থাপন করারও শর্ত ছিল। কিন্তু সরবরাহকৃত মালামাল উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কিনা যাচাই করা হয়নি। এছাড়া আইইডিসিআর পরীক্ষার ফলাফল প্রেরণ করে ১০ জুন। অর্থাৎ লার্ভিসাইড সরবরাহ করার ২৬ দিন পর। সম্প্রতি সরকারের নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের নিরীক্ষা রিপোর্টে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে।
এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টোরে থাকা মশার কীটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল চসিক। পরীক্ষার জন্য ১ ডিসেম্বর বিসিএসআইআর (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) গবেষণাগার চট্টগ্রামে আধা লিটার করে ‘লার্ভিসাইড’ (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) এবং ‘এডালটিসাইড’ (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) প্রেরণ করে। কিন্তু সংস্থাটি চসিককে জানিয়ে দেয়, মশার কীটনাশকের গুণগত মান তাদের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় না। বিসিএসআইআর গবেষণাগার থেকে জবাব পেয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএসটিআই’র সাথে যোগাযোগ করে চসিক। কিন্তু তারাও পরীক্ষা করতে পারেনি। ফলে জানা সম্ভব হয়নি নগরে চসিকের ছিটানো কীটনাশক আদৌ কার্যকর কিনা।