ইয়াবা বিক্রি থেকে চোরাই মোবাইল বিক্রি, ছিঁচকে চোর থেকে দাগী সন্ত্রাসী, সকলের আস্তানা হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ও আশপাশের এলাকা। নগরীতে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একবার হলেও ঢুঁ মারেন রেল স্টেশনে। স্টেশন এলাকার দখল নিজের কাছে রাখতে এখানে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্টেশন এলাকাটিকে অপরাধমুক্ত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এখানকার অপরাধী চক্রের একটি অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। ফলে অপরাধমুক্ত হচ্ছে না চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকা। রেল স্টেশন কেন্দ্রিক মাদকের আস্তানা ধ্বংস করে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বছর না যেতেই সেই রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে নতুন করে ভাবনায় পড়ে তারা। মাদক কারবারীরা এলাকা ছাড়ার পর রেল স্টেশন এলাকা হয়ে উঠে চোরাই পণ্য কেনা বেচার নিরাপদ আখড়া। গত এক মাসে নগরীতে ছিনতাই ও চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত চোর ও ছিনতাইকারীরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, চুরি বা ছিনতাইয়ের পর চোরাই পণ্য বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রির যাবতীয় লেনদেন চলে রেল স্টেশন এলাকায়।
কোতোয়ালী থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, রেল স্টেশন এলাকায় আমাদের থানার একটি টীম মোতায়েন থাকে। এছাড়া সিভিলেও একটি টীম দায়িত্ব পালন করে।এতে চোর ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ছে। কিন্তু সমস্যা হলো জামিনে এসে তারা পুরনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সোহরাব হোসেন জানান, স্টেশন এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িতদের পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। টিকিট কালোবাজারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় মাদক বহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। স্টেশনে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, এ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ ভাসমান। বাইরে থেকে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সটকে পড়লে অনেক সময় তাদের নাগাল পাওয়া যায় না। তবে অপরাধপ্রবণ এলাকা বলা যাবে না।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরাতন রেল স্টেশন থেকে নতুন রেল স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত ফুটপাতে বেচাকেনা চলে চুরি ও ছিনতাইয়ের পণ্য। মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে নানা পণ্য বিক্রি হয় কম দামে। এসব মালামাল কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত চোরাই মালামাল ক্রেতা হকার নেতা আনোয়ার পুলিশকে বলে, বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই হওয়া মালামাল জমা হয় এ মার্কেটে। ফলে কম দামে বিক্রি করে দেয়া হয়। এতে ঝামেলা কেমন জানতে চাইলে সে জানায়, মাঝে-মধ্যে ঝামেলা হয়।গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাসেল ওরফে হোয়াইট রাসেল (৪৫) নামে এক চোরকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। আটক রাসেল স্টেশন রোডের আব্দুর রহমান কমিশনার বাড়ির মৃত সেকান্দরের ছেলে।
২০ জানুয়ারি রাতে নগরীর নতুন রেল স্টেশন এলাকা থেকে চার হাজার পিস ইয়াবাসহ ইসমাইল (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো সে রাঙ্গুনিয়া থেকে কিনে ট্রেনে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিল।
ছিনতাইয়ের অভিযোগে সাতবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছে মো. শুক্কুর (৩২)। ১৬ জানুয়ারি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাতে রেল স্টেশন এলাকায় আবারো মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে শুক্কুর।