অবশেষে মেরিন ফুয়েল বিপণনে শুল্ক জটিলতা কাটল। বাংলাদেশের বন্দরে যাতায়াতকারী সমুদ্রগামী জাহাজে বাঙ্কারিং দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো ১৫ হাজার টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি করার প্রায় ৫ মাস পর নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে এ জটিলতা কেটেছে। আমদানিকৃত এসব জ্বালানি বিপণনের জন্য প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তবে সংশোধিত নীতিমালায় বিদেশি জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও দেশি জাহাজের জন্য সে সুবিধা রাখেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। দেশীয় জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কযুক্ত হিসেবে বিল পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। জানা যায়, বাংলাদেশের বন্দরে যাতায়াতকারী সমুদ্রগামী জাহাজে দীর্ঘদিন ধরে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং সুবিধা ছিল। বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বাঙ্কারিংয়ে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি জাহাজগুলোতে বাঙ্কারিং বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক নৌ-নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) বিশ্বব্যাপী সমুদ্রগামী জাহাজের সালফার নিঃসরণ কমানোর জন্য তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ (৩.৫০%) সালফার ফুয়েল অয়েলের পরিবর্তে লো-সালফার হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) হিসেবে দশমিক ৫ শতাংশ (০.৫০%) মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং করার নির্দেশনা দেয়। ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ‘বাংলাদেশের জলসীমায় যাতায়াতকারী দেশি বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে জ্বালানি সরবরাহের জন্য বাঙ্কারিং নীতিমালা’ গেজেট প্রকাশ প্রকাশ করে।
অন্যদিকে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শুরুতে দেড় লাখ টন মেরিন ফুয়েল আমদানির পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। ৭৫ হাজার টন সরাসরি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং ৭৫ হাজার টন ‘জি টু জি’ পর্যায়ে আমদানি হবে। প্রথম ধাপে ১৫ হাজার টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি করা হয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থাই জাহাজ ‘এমটি টিএমএন প্রাইড’-এ আসা এসব মেরিন ফুয়েল ১৬ সেপ্টেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির বন্ডেড ট্যাংকে খালাস নেওয়া হয়। খালাসের পর এসব মেরিন ফুয়েলের কাস্টমস ছাড়পত্র নিতে গেলে বিপত্তি তৈরি হয়। এসময় বিপিসি শুল্কমুক্ত সুবিধায় শুল্কায়ন করতে চাইলে নীতিমালায় ‘শুল্কযুক্ত’ থাকার কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড়পত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে চিঠি দেয় বিপিসি। এরপর নীতিমালা সংশোধনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে বৈঠক করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বিপিসি ও কাস্টমসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ‘শুল্কমুক্ত’ করে বাঙ্কারিং নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত আসে। এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এনবিআরকে চিঠিও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রণালয় বিদেশি জাহাজের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা রেখে লোকাল (স্থানীয় নৌ-পথে চলাচলকারী) জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে শুল্কযুক্ত সুবিধায় মেরিন ফুয়েল বিপণনের বিষয়ে নীতিমালা সংশোধের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ব্যাপারে বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাঙ্কারিংয়ের জন্য আমদানিকৃত লো-সালফার মেরিন ফুয়েল দীর্ঘদিন শুল্কায়ন জটিলতার কারণে বিপণন শুরু করা যায়নি। এখন বিদেশগামী জাহাজের জন্য শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে বিদেশগামী জাহাজে বাঙ্কারিং সরবরাহ দিতে কোন জটিলতা রইলো না। তবে লোকাল জাহাজের ক্ষেত্রে সে সুবিধা রাখা হয়নি। শুল্কযুক্ত হিসেবেই লোকাল জাহাজে বাঙ্কারিংক সরবরাহ দিতে হবে বিপণন কোম্পানিগুলোকে।’ তিনি বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাঙ্কারিং দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশগামী জাহাজ কিনা যাচাই করার পাশাপাশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ডকুমেন্ট সংগ্রহে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।’
এদিকে অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েল বিপণনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিপিসি। গতকাল সোমবার বিকেলে বিপিসির বিপণন ও বাণিজ্যিক বিভাগ এ নিয়ে যৌথভাবে বৈঠক করেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিদেশগামী জাহাজে বাঙ্কারিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটন মেরিন ফুয়েল চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৬৪ ডলার এবং মংলায় ৩৭৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু লোকাল জাহাজে শুল্কযুক্ত থাকায় প্রতিটনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭৬ ডলার। প্রতিলিটারের দাম ধরা হয়েছে ৪৫টাকা হিসেবে।’