ফুল আর ভালোবাসা যেন এক সুতোয় গাঁথা। ফুল ভালোবাসার প্রতীক, পবিত্রতার প্রতীক। প্রেম ভালোবাসা আছে আর সেখানে ফুল বা ফুলের মালা নেই, তাকি হয়! গোলাপের পাপড়িতে নয়ন রেখে প্রেমিকা তার প্রেমিককে কাছে টেনে নেয়। ফুলের কোমল পরশে ভালোবাসার মানুষটিকে হৃদমাজারে আগলে রাখতে চায়। ভালোবাসা আর বসন্ত যা-ই হোক, সেখানে থাকবে ফুলের ছোঁয়া-এটাই স্বাভাবিক। তাই তো বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে নতুন সাজে মেতে উঠেছে নগরীর চেরাগী পাহাড়ের ফুলের দোকানগুলো। ফুলের রাজ্যে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে সকাল থেকে তরুণ-তরুণীর সহস্র যুগল, নানা শ্রেণী পেশার মানুষ ছুটে আসেন এখানে।
করোনা সংকটের শুরু থেকে মলিন ছিল চেরাগী পাহাড়ের ফুল ব্যবসায়ীদের মুখ। অন্যান্য খাতের মতো ফুল খাতেও তাদের গুণতে হয় লোকসান। তবে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন এখানকার শতাধিক ফুল ব্যবসায়ী। এখন সবার মুখের হাসির ঝিলিক। এরই মাঝে হাজির হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং বসন্ত উৎসব। এ নিয়ে ফুল বিকিকিনির ধুম পড়ে যায় ফুলের দোকানগুলোতে। ফুল এখন আর সৌখিনতা নয়, ফুল এখন মাধুর্য, বিশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির প্রকাশ। ফুল ব্যবসায়ীরাও বুঝেন কখন কোন ফুলের কেমন চাহিদা হতে পারে। তাই দিবসটিকে ঘিরে ফুল ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আয়োজন থাকে। প্রতিবারের মতো এবারও বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের উৎসবে ৩ কোটি টাকার মতো ফুলের ব্যবসা হওয়ার কথা জানিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস আজ হলেও শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ফাগুনের রঙ। ফাগুন তো ফুলে ফুলেই আগুন ঝরায়। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে ফুল-ফাগুনের আগুন লেগেছে নগরীর ফুলের দোকানগুলোতে। এ যেন ফুল বাজার নয়, ফুল বাগান। মনোমুগ্ধকর সুভাসও ছড়াচ্ছে চেরাগী পাহাড় থেকে ডিসি হিল-সিআরবি শিরিষ তলাসহ স্টেডিয়ামের আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে। ফলে পার্কসহ উন্মুক্ত বিনোদন স্পটগুলো ফুলে ফুলে আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। নগরীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’স লেক, কাজির দেউড়ি শিশুপার্ক গুলোতে দেখা যায় কেউ খোঁপায় গেঁথে, কেউ গলায় পরে আবার কেউ হাতে ফুল নিয়ে প্রবেশ করছেন।
চেরাগী পাহাড় ফুল ব্যবসায়ী শাহ মজিদিয়া রশিদিয়া পুস্প বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. মোজাম্মেল হক মিঠু জানালেন, ভালোবাসার দিনে লাল গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এবারো বিশেষ দিবসটিকে সামনে রেখে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ফুল চাষীদের কাছে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়েছিল। তিনি জানান, বছরের অন্যান্য সময় দেশীয় গোলাপ প্রতি পিস ৫ টাকা বিক্রি হলেও বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সে ফুল বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এছাড়া চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। বিদেশ থেকে এসেছে চন্দ্রমল্লিকা, লিলি, স্নো বল, কারনিশা, সারভারা, লিমু, টিউলিপসহ নানা প্রজাতির ফুল। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই এসব ফুল আনা হয়েছে। বিক্রি আশানুরূপ বলে জানালেন তিনি। সব মিলে এবার ৩ কোটি টাকার মতো চেরাগী পাহাড় কেন্দ্রিক ফুল বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানান এই ফুল ব্যবসায়ী।
বসন্ত উৎসবে ফুল কিনতে এসেছেন লেখিকা লিপি বড়ুয়া ও তানজিনা রাহী। খোঁপায় বাঁধার জন্য ফুল নিতে আসেন চেরাগী পাহাড়ে। কথা প্রসঙ্গে বলেন, শীতের বিদায়-বসন্ত এসে দোলা দিয়েছে। বসন্তের কথা বলতেই মনের মধ্যে মাতাল হাওয়া দোলা দেয়। বাঙালির রূপ-বৈচিত্র্যে বসন্তের আমেজ সবকিছু থেকে আলাদা। উদাসী-বাতাস-উরু উরু মন, সব মিলে এক ভালোলাগা অনুভূতি।
হঠাৎ করেই ফুলের দাম চারগুণ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফুল ব্যবসায়ী ও চাষি সমবায় সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি কুতুব উদ্দিন শাকিল জানান, এখন চায়না গোলাপ বন্ধ। কেনিয়া ও ভারত থেকে ফুল আসছে। কেনিয়ার গোলাপ প্রতি পিস ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতের গোলাপ ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, দেশি গোলাপ ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুল বিক্রেতা আরও বলেন,‘ বসন্ত এবং ভালোবাসা দিবস, সামনে ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা এদিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করি। প্রায় এক বছর ধরে ফুল ব্যবসায়ীদের খুবই খারাপ সময় গেছে। এখন বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ব্যবসা একটু জমে উঠেছে।