সহজেই কাছের দূরত্ব অতিক্রম করা যায় বলে মোটর সাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যাও। অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকই নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন। নিয়ম ভঙ্গের তালিকায় সবার উপরেই রয়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা। চট্টগ্রামের রাজপথে প্রতিদিন নামছে নতুন মোটরসাইকেল। একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালাতে গিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে। দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবেও কাজ করছে। নগরীর রাস্তাগুলোতে যানজট সৃষ্টিতেও রাখছে ভূমিকা। মোটরসাইকেলের কারণে কমে যাচ্ছে অন্যসব যানের গতিও। বিশেষ করে সিগন্যাল উপেক্ষা করে ছোটে শত শত মোটরসাইকেল। ইতোমধ্যে বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে সংগৃহীত তথ্যমতে, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় মোটরসাইকেল সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে মোটর বাইকার নিহত হয়েছেন ১৮ জন। আরোহী ৫ জন। আর মোটরবাইকের ধাক্কায় মারা গেছেন ৬ জন। মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমিয়েছে সরকার। ১০০ সিসি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ৪ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম বিআরটিএ মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম বিআরটিএ থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৬টি মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তা তিনি জানাতে পারেননি। তবে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটর সাইকেলের চেয়ে লাইসেন্সবিহীন মোটর সাইকেলের চালকদের কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মোটরসাইকেলের কারণে রাস্তা এখন ঝুঁকির মুখে। মোটরসাইকেলের এ দৌরাত্ম্যরোধে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ সিদ্ধান্ত নেয় যে, অন্তত শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে কেউ আর মোটরসাইকেল কিনতে পারবে না। সড়কের নিরাপত্তায় মোটরসাইকেল বিক্রির সময় ক্রেতার ন্যূনতম শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তা বিক্রেতাকে নিশ্চিত করতে হবে। বিআরটিএ’র এ সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকর সে সম্পর্কিত পরিসংখ্যান নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে।
গত কয়েক দিনে নিউমার্কেট মোড়, জিইসির মোড়, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি, গোলপাহাড় মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ সড়ক, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, আগ্রাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব সিগন্যালে মোটরসাইকেল চালকরা ওঁৎ পেতে থাকে ক্রসিং অতিক্রম করার জন্য। তারা কোনো রকম ট্রাফিক সিগন্যাল মানে না। সুযোগ পেলেই দ্রুত সিগন্যাল ডিঙিয়ে ছোটে। আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে সড়কজুড়ে চালকরা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মোটরসাইকেল চালায়। এতে চলমান গাড়িগুলোর চালকরা হকচকিয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই রাস্তায় মোটর সাইকেল চালকদের সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ি থেকে শুরু করে অন্যান্য যানবাহনের চালকদের বচসায় লিপ্ত হতেও দেখা যায়। মোটর সাইকেল চালকদের কারণে চট্টগ্রামের রাস্তায় হুটহাট গাড়ি ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহনগুলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে বেশি খেসারত দিতে হবে। এবিষয়ে নগর পুলিশের ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক-উত্তর) মো. মশিউর রহমান আজাদীকে বলেন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটা সার্বিক অ্যাপ্রোচ আছে। এটি মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রেও। তবে সম্প্রতি শহরে মোটরসাইকেলের আধিক্য বেড়েছে। তারা অনেক সময় সিগন্যাল লঙ্গন করে তড়িঘড়ি পার হতে চায়। এখন মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগর পুলিশের ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মো. মহিউদ্দিন খান আজাদীকে বলেন, চেকপোস্টে অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে মোটর সাইকেলই বেশি ধরা পড়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশীতে আমরা দেখেছি ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেল আটকের সংখ্যাই বেশি। এরমধ্যে অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ছিল কিছু। তিনি বলেন, ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা। এদের নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন। তবে এখন ৯৫ শতাংশের বেশি চালক ও পেছনের যাত্রী হেলমেট পরছেন।