দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন গাড়িতে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। এতে আতংকের মধ্যে গাড়িতে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিশেষ করে মাইক্রো, হাইচ, নোহা গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। তাই অপরিচিত এসব গাড়ি এড়িয়ে চলতে অনুরোধ জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই, বারইয়ারহাট-সীতাকুন্ডে যারা প্রতিদিন গাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাদের টার্গেট করেন সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার চাকরিজীবিরা তাড়াহুড়ো করে বাড়ি যেতে চান। গাড়িতে যাত্রীর বেশি চাপ থাকার সুযোগ নিয়ে কৌশলে ওইদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। এছাড়া অন্যান্য দিনও বাড়ছে ছিনতাই। কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের টার্গেট করছে বেশি।
মীরসরাইয়ের পূর্ব খৈয়াছরা গ্রামের ভুক্তভোগি সাজ্জাদ হোসেন জানান- গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় স্ত্রী সেলিনা আক্তার সহ বারইয়ারহাট থেকে একটি হাইচ গাড়িতে বড়তাকিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়ি নাহার এগ্রো এলাকায় এলে তাদেরকে ছুরি ও পিস্তলের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও নগদ টাকা সহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের প্রভাষক আলী আক্কাস জানান- গত এক সপ্তাহ পূর্বে মীরসরাই থেকে ফেনী যাবার জন্য একটি মাইক্রোবাসে উঠলে মাঝপথে ওরা যাত্রীদের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাকে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে এটিএম কার্ড দিয়ে ব্যাংক থেকে লক্ষাধিক টাকা তুলে নেয়। এ বিষয়ে মীরসরাই থানায় জিডি করেছেন তিনি। মহাসড়কে চলাচলকারী চালকসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ইদানিং যাত্রীবেশে ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন, কখনো কখনো আহত হচ্ছেন। পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে।
সম্প্রতি বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে উঠা ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট শাখার কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন, এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও আরো এক ব্যক্তির কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে সব ছিনিয়ে নেয় মাইক্রোতে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা। সাথে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন ইষ্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) মীরসরাই উপশাখার ব্যবস্থাপক জামাল উদ্দিন (৩৮)। রাত আনুমানিক ৯টায় মিরসরাই সদর থেকে হাইস গাড়ি যোগে ফেনী যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফাজিলপুর এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
১৫দিন আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে মাইক্রো যোগে বাড়ি ফেরার পথে সাহেরখালী ইউনিয়নের দুই ভাইকে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। সম্প্রতি বড়দারোগারহাটের এক শিক্ষকের ল্যাপটপ, জমি কেনার টাকাসহ লুট করে উনাকে কুমিল্লায় নিয়ে ফেলে দেয়া হয়।
এবিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ইদানিং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বারইয়ারহাট কেন্দ্রিক সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতায় লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও হাইচ গাড়িতে না ওঠাই উত্তম। মীরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন- আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডাকাত আটক করেছি। শীঘ্রই আরো ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হবে ।