ঢাকায় ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেপ্তার জি কে শামীমকে এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণের দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামি জি কে শামীমকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, ৭১ কোটি এক লাখ ২৯৫ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের দরপত্র কাজে অভিযুক্ত আসামি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। দরপত্রের শর্তানুযায়ী নির্মাণ কাজের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃজনপূর্বক এই দরপত্র হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় দুদকের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক। একই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি ফজলুল হক পলাতক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ ১০ মার্চ নির্ধারিত আছে বলে জানায় দুদক। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১’র সহকারী পরিচালক ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল আসামি জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। গত সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা জি কে শামীমকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। দুর্নীতির পৃথক মামলায় ঢাকা কারাগারে বন্দি রয়েছে এই ক্যাসিনো সম্রাট।
২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় নিজ কার্যালয় থেকে নগদ অর্থ, বিদেশি মদ ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয় জি কে শামীমকে। ওই ঘটনার পর অক্টোবরে দুদকের মামলায় শামীম গ্রেপ্তার হয়েছিল। গত বছর ২২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ পেতে জালিয়াতির অভিযোগ এনে জি কে বি এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া শামীম ও দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিমকে আসামি করে একটি করে দুদক। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১’র সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সাথে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম যুক্ত করে রেজিস্ট্রেশন দেখিয়ে এবং নিবন্ধিত শেয়ারের চেয়ে বেশি সংখ্যার শেয়ার দেখিয়ে দরপত্র জমা দেয়া হয়। কাজ পেতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা, বিগত পাঁচ বছরের বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শেষের সনদ এবং অতীতের টার্নওভারের যে শর্ত দেয়া হয়েছিল সেগুলোর ক্ষেত্রেও বানানো কাগজপত্র জমা দেয়া হয় বলে দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। দুদুক জানায়, অভিযুক্তদের আগের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান দুটি ছিল প্রপাইটরশিপ ফার্ম। কিন্তু পরে তারা লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে দরপত্রের জন্য যখন কাগজ জমা প্রদান করে তখন ওই ফার্মগুলোকে কোম্পানি হিসেবে দেখিয়েছিল। এজন্য জমা দেয়া কিছু কাগজপত্রে জালিয়াতি করা হয়েছিল।
দুদকের মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে অতি সুক্ষ তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রভাবিত করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করার অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল। মামলার এজাহারে আসামি জি কে শামীমের ঠিকানা দেখানো হয়েছে ঢাকা সবুজবাগে ৬৯/এ পূর্ব বাসাবো এলাকায়। অন্যদিকে ফজলুল করিমের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ঢাকা ৩০/এ নয়াপল্টন এলাকাতে। আসামি ফজলুল করিমের স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে ফেনী সদর নৈরাজপুর এলাকায়। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৪২০ / ৪৬৭ /৪৬৮ /৪৭১ / ৪০৯ / ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক নথিসূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবনের (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট। জি কে বি এন্ড কোম্পানি লিমিটেড লিড ফার্ম হিসেবে এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লি. পার্টনার ইনচার্জ হিসেবে এ দরপত্রে অংশ নেয়। ওই কাজের জন্য প্রথম নিম্ন দরদাতা হয় দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স- জি কে বি এল (জেভি)। ৭৫ কোটি টাকার এই কাজের চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। ২০১৮ সালের নভেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত ছিল।