মিয়ানমারে নভেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে বেসামরিক সরকার এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে সামরিক হুমকিতে অভ্যুত্থানের যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো। গত বছর ৮ নভেম্বরের ওই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করে আসা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের অভিযোগ আমলে না নিলে বাহিনীর পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই হুমকির মধ্যেই মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। এমন পরিস্থিতিতেই জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য আরও ১২টি দেশ শুক্রবার আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। তাছাড়া, মিয়ানমারের নির্বাচনের ফল পরিবর্তন কিংবা গণতান্ত্রিক রূপান্তর ব্যাহত করার যে কোনও প্রচেষ্টারই তারা বিরোধী বলেও জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস এক বিবৃতিতে সব পক্ষকেই কোনও ধরনের উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সাধারণ নির্বাচনের ফলকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে সব বিরোধ বৈধ পন্থায় সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারে আগামী সোমবার পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগে বেসামরিক সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনাতেও উত্তেজনা কমেনি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন পার্টির এক মুখপাত্র। সেনাবাহিনী-পন্থি বিক্ষোভকারীরা দু’টো নগরীতে জড়ো হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সোমবার পার্লামেন্টের শান্তিপূর্ণ অধিবেশন আহ্বানের দিকে তাকিয়ে আছে। মিয়ানমারে গতবছর ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। ২০১১ সালে সরাসরি সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে ফেরা মিয়ানমারে এটি ছিল দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন; যে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়েছে বলেই মত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের।
কিন্তু সেই নির্বাচনেই ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধীদল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)। নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর তাতেই দেশটিতে এ যাবৎকালের মধ্যে সরাসরি সবচেয়ে বড় সংঘাতে জড়িয়েছে বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনী।
মিয়ানমারের সংবিধানে পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু আগেই নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবনার দাবি জানিয়েছে।