গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির শাস্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনমন ঘটেছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আলোচিত সেই গবেষণা প্রবন্ধে তার সহকর্মী অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানও শাস্তি পাচ্ছেন। তাকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে। এছাড়া পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির আরেক ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে অবনমন ঘটানো হয়েছে। তার ডিগ্রিও বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। দুটি ঘটনায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই তিন শিক্ষকের শাস্তি নির্ধারণে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। খবর বিডিনিউজের।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গঠিত দুটি ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। পুরো প্রসিডিংস তৈরি হলে বিস্তারিত বলা যাবে। সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, যাদের শাস্তি হয়েছে, তাদের এখানে আর আপিলের সুযোগ নাই। তবে তারা চাইলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করতে পারবে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে গতকাল সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, সামিয়া রহমানকে দুই বছরের জন্য সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনমন করা হয়েছে। দুই বছর পর সিন্ডিকেট তার পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করবে।