রণেশ দাশগুপ্ত – প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিবেদিত এক সংগ্রামী আদর্শ। ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রগতিপন্থী সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। লেখালেখি ও সাংবাদিকতায়ও রণেশের অবদান ছিল অনন্য।
রণেশ দাশগুপ্তের জন্ম ১৯১২ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতে, আসামের ডিব্রুগড়ে। পৈত্রিক নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওদিয়ায়। স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত কাকা নিবারণ দাশগুপ্তের সংস্পর্শে রণেশ ছেলেবেলাতেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে পরিচিত হন। ১৯৩০-এ বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজের ছাত্র তরুণ রণেশ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। আর এই অভিযোগ এনে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ভর্তি হন বরিশালের বি.এম কলেজে। ১৯৩৬ সালে জীবনের তাগিদে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। তাঁর সাংবাদিকতার শুরু ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকায়। পরবর্তীসময়ে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ-এ। দীর্ঘদিন তিনি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রণেশ ছিলেন বাম রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী। গণমুখী সাহিত্য আন্দোলন ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ গড়ে তোলার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নানামুখী কর্মকাণ্ডে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ‘উদীচী’, ‘খেলাঘর’, ‘সৃজনী সাহিত্য গোষ্ঠী’ প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে প্রত্যয়ী ছিলেন আজীবন ত্যাগী এই মানুষটি। রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে অনেকবার জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই আপস করেন নি। সকল প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে বরাবরই তিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। রণেশ দাশগুপ্ত রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে : ‘আলো দিয়ে আলো জ্বালা’, ‘উপন্যাসের শিল্পরূপ’, ‘শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে’, ‘ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রাম’, ‘কখনো চম্পা কখনো অতশী’ ; সম্পাদিত গ্রন্থ ‘জীবনানন্দ দাশের কাব্যসম্ভার’, ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যসমগ্র’ প্রভৃতি। ১৯৯৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর প্রয়াত হন রণেশ দাশগুপ্ত।
