বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড সংলগ্ন জালালাবাদের পাহাড় নতুন করে দখল শুরু হয়েছে। ভূমিপুত্রদের থাবার আঁচড় লেগেছে পাহাড়গুলোতে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পাহাড় ন্যাড়া করে টিনের ঘেরা দিয়ে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ওখানকার অসংখ্য পাহাড়ে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোকজন নামে-বেনামে এসব পাহাড় দখল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তৈরি হয়েছে চার লেনের সড়ক। এই লিংক রোড নির্মাণের কারণে এখানকার পাহাড়ি জমির চাহিদা বেড়েছে। তবে লিংক রোডটির পাশে জালালাবাদ ও সলিমপুরের পাহাড়ে করোনাকালে গড়ে ওঠা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করে প্রশাসন। গত ২৪ জুন পরিচালিত অভিযানে ১৬ পাহাড়ের অবৈধ ৩৫০ বসতি উচ্ছেদ করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ মিটার জব্দ ও সংযোগও বিচ্ছিন্ন করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ৬ মাসের ব্যবধানে নতুন করে দখল উৎসব শুরু হয়েছে জালালাবাদ পাহাড়ে।
গত সোমবার বিকেলে শেরশাহ মোড় থেকে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড হয়ে সরেজমিন দেখা যায়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি পেরুলেই দুই পাশের পাহাড় দখলের চিত্র। একপাশে পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। উঠছে নামে-বেনামে সাইনবোর্ড। আরেক পাশে বিভিন্ন ছিন্নমূল সমিতির নামে সবুজ পাহাড় দখলের প্রতিযোগিতা। এখানকার পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করে বেচাবিক্রিও শুরু করেছেন অনেকে। অতি সম্প্রতি জালালাবাদ অংশে লিংক রোড লাগোয়া একটি সবুজ পাহাড়কে সম্পূর্ণ ন্যাড়া করে টিন দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। আশেপাশের অনেক পাহাড় চূড়াতেও উঠেছে নতুন নতুন সাইনবোর্ড।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ইন্ধনে অসংখ্য সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে তৈরি করছে এসব অবৈধ বসতি। পুলিশ সদস্য, আইনজীবী, ভূমি ও রেজিস্ট্রেশন অফিস সংশ্লিষ্ট লোকজন সরকারি এসব পাহাড় দখলের সাথে জড়িত। আবার পাহাড়গুলো সরকারি হলেও কিছু কিছু সিন্ডিকেট সরকারি বন্দোবস্তের সুযোগে নিজের নামে করে নিয়েছে পাহাড়গুলো। আইন মারপ্যাঁচে অনেকে এসব পাহাড় ব্যক্তি মালিকানাধীন বানিয়ে বেচাবিক্রিও করছে। বায়েজিদ- ফৌজদারহাট লিংক রোড হওয়ার কারণে আশপাশের পাহাড়গুলোর কদর বেড়েছে কয়েক শত গুণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সরকার দেশের উন্নয়নের স্বার্থে পাহাড় কেটে রাস্তা করেছে। আমরা মনে করেছি- দেশের উন্নতির জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার জন্য এখানে পাহাড় কেটেছে। এখন প্রশাসনের উচিত বায়েজিদ লিংক রোডের আশপাশের পাহাড়গুলো রক্ষা করা। এখন জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে এসব পাহাড় রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘শুধু পাহাড় দখল করছে তা নয়, এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নিয়েছে অনেকে। আবার অনেকে সরকার থেকে লিজ নিয়ে বিনোদন স্পট তৈরির নামে পার্ক, রিসোর্ট নির্মাণের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এটা হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। এখন সরকারের উচিত পরিবেশবান্ধব উপায়ে সবুজ পাহাড়গুলো রক্ষায় দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেয়া।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাটা পাহাড়গুলো বর্ষাকালে খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। যে কারণে গত ২৪ জুন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করেছিলাম। এসব বসতির বেশিরভাগ করোনাকালে নির্মাণ করা হয়েছিল। অভিযানের পর এই কয় মাসে পুনরায় অনেক পাহাড় দখলের বিষয়টি আমরা শুনেছি। এখন পুনরায় পাহাড় দখলকারীদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেব।