করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) দেশে আরও ৩৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছিল গত ৪ নভেম্বর। এরপর ৩৮ দিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আরও এক হাজার জন মারা গেছেন। বিডিনিউজ
আজ শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির সবশেষ যে তথ্য জানানো হয়, তাতে আরও ৩৪ জনের মৃতের খবর আসে।
এক দিনের ব্যবধানে মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ বাড়লেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে মৃত্যু ৬.১৭ শতাংশ এবং শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১২.৮৫ শতাংশ কমেছে।
দেশে প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
প্রথম মৃত্যুর এক মাস পর ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছিল। তা হাজার ছাড়িয়েছিল ২০ দিন পর গত ১০ জুন।
এরপর এক মাসেরও কম সময়ে ৫ জুলাই আরও এক হাজার মানুষ যোগ হয় মৃতের তালিকায়, যা সংখ্যাটি দুই হাজারের ঘরে নিয়ে তোলে।
মৃতের সংখ্যা আরও এক হাজার বাড়তে লেগেছিল আরও কম সময়। ২৩ দিনেই ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে।
এরপর ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার এবং তার প্রায় এক মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়ায়।
তার পরের এক হাজারের মৃত্যুতে সময় লেগেছিল ৩৩ দিন; আরও এক হাজার বেড়ে ৭ হাজার ছাড়াতে লাগল ৩৮ দিন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ লাখের মতো। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (২ লাখ ৯৫ হাজার), বাংলাদেশ রয়েছে ৩২তম স্থানে।
শনাক্ত রোগী বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম অবস্থানে। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ১১ লাখের বেশি যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে দেড় কোটির বেশি।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৩২৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৮ জন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ১৮৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৫০৩ জন হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বাধিক শনাক্ত।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০.৫২ শতাংশ। মোট পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬.৫৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৪ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন, নারী ১১ জন। এই ৩৪ জনের মধ্যে ৩২ জনই হাসপাতালে মারা গেছেন; বাড়িতে মৃত্যু হয় দুজনের।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ নাগাদ যারা মারা গেছেন, তাদের ৫ হাজার ৩৬২ জন পুরুষ, নারী ১ হাজার ৬৫৮ জন।
মৃত ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। এছাড়া ৯ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে। আর ১ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
এই পর্যন্ত যারা মারা গেছেন, তাদের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে জানানো হয়, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মৃত্যুর হার ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২ দশমিক ২২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ ও শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২৪ জন। বাকিদের মধ্যে ৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের ও ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে মৃতের হার ঢাকা বিভাগে ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, খুলনায় ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, বরিশালে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ,সিলেটে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ,রংপুরে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।