হাসন রাজা সত্যের সাধনায় নিবেদিত এক সাধক ও মরমি কবি হিসেবে বিখ্যাত। লৌকিক ভাবধারায় তিনি সংগীত সাধনা ও চর্চা করেছেন।
হাসন রাজার জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ছিলেন জমিদার। তরুণ হাসন জমিদারদের মতোই বিলাসি জীবন যাপন করেছেন। পরিচিত ছিলেন অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ও বিলাসী রাজা হিসেবে। কিন্তু এক আধ্যাত্মিক স্বপ্ন-দর্শন পালটে দেয় তাঁর জীবন দর্শন। পরিণত বয়সে নিজস্ব সম্পত্তি বিলি-বণ্টন করে বেছে নেন সন্ন্যাসী জীবন। শৈশব থেকেই হাসন রাজা ছিলেন সংগীতানুরাগী, অভিনয়ে অনুরক্ত। তরুণ বয়সে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলায় তিনি অভিনয় করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ছিল না বললেই চলে। কিন্তু সহজ, সরল ভাষায় ও মনকাড়া সুরে চমৎকার গান বাঁধতেন। এইসব গানে আধ্যাত্মভাব, মানবপ্রেম, বিশ্বপ্রেম আর মরমি চেতনার চমৎকার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। স্থানীয় বাউল ফকিররা হাসনের গান গেয়ে বেড়াতো। তাঁর গানের প্রধান দার্শনিক তত্ত্ব জীবাত্মার মধ্যেই পরমাত্মার সন্ধান লাভ সম্ভব। হাসন রাজা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বেশ কিছু গান রচনা করেছেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা প্রায় হাজার খানেক। গানগুলো ‘হাসন উদাস’, ‘শৌখিন বাহার’ ও ‘হাছন বাহার’ গ্রন্থে মুদ্রিত রয়েছে।
হাসন রাজার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা না আমার/ কি ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার’, ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপরে/ আরে দিলের চক্ষে চাহিয়া দেখ বন্ধুয়ার স্বরূপ রে’ প্রভৃতি। হাসন রাজা তাঁর বিভিন্ন গানে নিজেকে ‘বাউলা’, ‘উদাসী’, ‘পাগলা হাসন রাজা’ ‘দেওয়ানা’ ইত্যাদি রূপে অভিহিত করেছেন। তাঁর উদ্যোগে সুনামগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় হাসন.এম.ই হাই স্কুল। এছাড়া বেশ কিছু দেবালয় ও আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর এই মরমি শিল্পী প্রয়াত হন ।