কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের পুত্র, চট্টগ্রামে লায়নিজমের অন্যতম ভ্যানগার্ড, খ্যাতিমান সমাজসেবক লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, দুই কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে রাউজানসহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ সকাল দশটায় তাঁর মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাউজানের কুণ্ডেশ্বরীতে সৎকার করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে রুজুকৃত মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনে লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ ( পি আর সিনহা) পিতা অধ্যক্ষ শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের পদাংঙ্ক অনুসরণ করেই শিক্ষা ও সমাজ সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর পিতা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রার জন্য রাউজানের গ্রামাঞ্চলে কুণ্ডেশ্বরী বালিকা মহাবিদ্যালয়, কুণ্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যামন্দির, কুণ্ডেশ্বরী আয়ুর্বেদিক কলেজ ও কুণ্ডেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি গহিরা হাই স্কুল, গহিরা কলেজ, রাউজান কলেজ, রাউজান স্কুল, হাটহাজারী কলেজ, বাঁশখালী কলেজ, ফতেয়াবাদ কলেজসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মানবতার সেবায় ভারত উপমহাদেশের অন্যতম আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিঃ প্রতিষ্ঠা করেন। কুণ্ডেশ্বরী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মাধ্যমে বহু জনহিতকর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। বর্তমানে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও মনোরমা হল (আবাসিক ছাত্রী নিবাস), লায়ন্স সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পূর্ব গহিরা রামজীবন নূতন চন্দ্র সিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব গহিরা কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেড, পূর্ব গহিরা কল্যাণ সংসদ, শ্রী শ্রী কুণ্ডেশ্বরী পূজা উদযাপন পরিষদ, শহীদ নূতন সিংহ স্মৃতি সংসদসহ বহু জনহিতকর প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়।
পিতা অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ মুুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর পিতার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নেন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ। তিনি পিতার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিক্ষা ও সমাজসেবায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। ১৯৪০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী পি আর সিনহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম ডিগ্রি নিয়ে পিতার ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, লন টেনিসের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। জড়িত ছিলেন চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাব, ইয়ংস্টারস ক্লাব সহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের সাথে।
সমাজসেবার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৭ সালে যোগ দেন লায়নিজমে। লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্নমুখী কার্যক্রমে অংশ নেন। লায়নিজমের সেবার জগতে নিজেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ২০০২- ২০০৩ সেশনে তিনি লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি ৪ এর গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কল ছিল ‘সিভিল সোসাইটি ফর পিস’ (শান্তির জন্য সুশীল সমাজ)। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি লায়নিজমের প্রতিটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। প্রসারিত করেছেন সেবার হাত।
গত বেশ কিছুদিন ধরে তিনি নানা ধরনের রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে। গতকাল সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
লায়ন পি আর সিনহার মৃত্যুতে লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি ৪ এর গভর্নর লায়ন ডাক্তার সুকান্ত ভট্টাচার্য, ফাস্ট ভাইস গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষ, সেকেন্ড ভাইস গভর্নর লায়ন শেখ সামশুদ্দীন আহমেদ সিদ্দিকী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। লায়ন নেতৃবৃন্দ পি আর সিনহার আত্মার সদগতি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রবর্তক সংঘ, রাউজান জগতপুর আশ্রম অনাথালয়, মৃদৃল দে সুহৃদ সংঘ, হাটহাজারী পুণ্ডরীক ধামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নেতৃবৃন্দও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম.এ সালাম এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: আতাউর রহমান, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আবদুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত, প্যানেল মেয়র-২ জমির উদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ সভাপতি কবি জিন্নাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আহমেদ খসরু লায়ন পি আর সিনহার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।