‘জাদুকর’ কিংবা ‘ফুটবলের রাজপুত্র’ যে নামেই ডাকা হোক; ডিয়েগো ম্যারাডোনা কেবলমাত্র একজন বিশ্বসেরা ফুটবলার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন ‘চরিত্র’।
একজন সত্যিকারের ‘চরিত্র’ যাকে নিয়ে সব ধরনের কল্পনা, গল্প কিংবা চিত্র আঁকা যায়, সেলুলয়েডের ফিতায় গাঁথা যায়। ছিলেন বিশ্ব ফুটবলের স্বপ্ন পুরুষ। চরিত্রের এপিট-ওপিঠ উভয় পাশেই তিনি সমান তালে দাপুটে অভিনয় করেছেন। এক উদ্দাম জীবন। যার বাঁকে বাঁকে তর্ক আর বিতর্ক।
অসামান্য প্রতিভায় সারা বিশ্বকে সম্মোহিত করেছিলেন, কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের কয়েক কোটি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন, দিনে দিনে সেই মানুষটা হয়ে উঠেছিলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। কখনো ঈশ্বর, কখনো মানবীয় ডিয়েগো মাটিতে নেমে এসেছেন স্বেচ্ছা ভুলের কারণে, জানান দিয়েছেন তিনিও মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নন। তাকে বলা যায় ফুটবলের গ্ল্যামার বয়। ‘হ্যান্ড অফ গড’, কিংবা ছিয়াশির সেই সন্ধে। নিজের সেন্টার সার্কেল থেকে বল ধরে প্রায় ষাট গজ ধরে ইংল্যান্ডের একের পর এক ছজনকে কাটিয়ে গোল করে এলেন। চোখের পাতা পড়েনি সেদিন। এমনও হয়! গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি। যা দেখে টিভি ধারাভাষ্যকার বলে ওঠেন, ‘কোন গ্রহ থেকে এসেছেন’? এমন অসংখ্য মন মাতানো ড্রিবল, ছোটোখাটো চেহারায় ডিফেন্ডারদের মাত দিয়ে অসংখ্য গোলের স্মৃতি। কিন্তু থাকলেন না সেইসব ইতিহাসের স্রষ্টা দিয়েগো মারাদোনা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কখনোই হিপোক্রেট ছিলেন না। ছিলেন আজন্ম যোদ্ধা। সাফল্যের যশ, খ্যাতিকে পায়ে ঠেলে ক্ষমতাপূজারী ও নাচুনে বিশ্বকে তিনি থোড়াই কেয়ার করেছেন।
এ কারণেই সাম্রাজ্যবাদী ও শোষকদের কাছে তিনি ছিলেন চক্ষুশূল। ভ্যাটিকানে ঘুরে এসে তিনি একবার বলেছিলেন- ‘ভ্যাটিকানে গিয়ে আমি দেখেছি সোনায় মোড়া ছাদগুলো। এদিকে পোপ বলছেন দরিদ্রদের ব্যাপারে তাঁরা সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন। তাহলে ওই ছাদগুলো বেচে দিচ্ছেন না কেন? দিন না! অন্তত কিছু তো একটা হবে!’ নিজের সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়াণে কিংবদন্তী পেলে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই, আমরা একদিন আকাশে একসঙ্গে ফুটবল খেলব।’ শান্তিতে ঘুমাও দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। তুমি চিরন্তন, ফুটবল বিশ্বে তুমি অমর।