আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের গভর্নমেন্ট হাউজ। করোনার কারণে দীর্ঘ দিন এই ভবন খোলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যারাডোনার মৃত্যুতে খোলা হলো সে প্যালেসের তালা। তার আগে প্যালেসের সব মালপত্র বের করে ফেলা হয়। সে জন্য একেবারে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় প্যালেসটিকে। আর সেখানেই শ্রদ্ধা জানালেন লাখো আর্জেন্টাইনরা। সময় যতই গড়াচ্ছিল ততই দীর্ঘ হচ্ছিল ভক্তদের লাইন। নির্ধারিত সময়ের পরও খোলা রাখতে প্যালেসের দরজা। এক পর্যায়ে দরজা বন্ধ করতে গেলে ভক্তদের সাথে সংঘর্ষও হয় পুলিশের। যেন ফুটবল ঈশ্বরকে বিদায় দিতে চাইছিলনা ভক্তরা। ফলে গভর্নর প্যালেসে ম্যারাডোনার মরদেহ তিনদিন রাখার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল আর্জেন্টিনা সরকার সেখান থেকে সরে আসে। গতকাল সমাহিত করা হয় তাকে।
ফুটবল ঈশ্বর চলে গেছেন। আর কখনো ফিরবেনা। সেটা যেন মানতে পারছেনা লাখ লাখ ভক্তরা। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদায় দিতে হলো ম্যারাডোনাকে। গত বুধবার থেকে লাখো ভক্তের পদচারণায় গভর্নর প্যালেস মুখর থাকলেও শেষকৃত্য আয়োজন ছিল একান্তই পারিবারিক। কেবল পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মিলে ২৪ জনের মতো ছিলেন শেষকৃত্যে। সন্ধ্যায় শহরের অদূরে বেইয়া ভিস্তা সমাধিস্থলে বাবা-মার পাশেই সমাহিত করা হয় দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনাকে। ম্যারাডোনার বাবা দিয়েগো ম্যারাডোনা চিতোরো ২০১৫ সালে এবং মা দালমা সালভাদোরা ফ্রান্সো ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মা-বাবার পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। শহরের মধ্য দিয়ে যখন ম্যারাডোনার মরদেহবাহী গাড়ি যাচ্ছিল তখন রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয় নায়ককে শেষ বিদায় জানান ভক্তরা। শোকে বিলাপ করছিল ভক্তরা। চারদিক থেকে ফুল ছিটানো হচ্ছিল মরদেহবাহী গাড়ির উপর। বেইয়া ভিস্তা সমাধিস্থলের ভেতরে যখন ম্যারাডোনাকে সমাহিত করার প্রক্রিয়া চলছিল তখন বাইরেও অবস্থান নিয়েছিলেন হাজারো ভক্ত।
কাসা রোসাদার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে দিনভর ম্যারাডানোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অসংখ্য ভক্ত। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় দশ লাখ ভক্ত শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা ও ম্যারাডোনার প্রতীকে পরিণত হওয়া ১০ নম্বর জার্সিতে মোড়ানো ছিল কফিন। ভক্তরা কেঁদেছেন, চুমু দিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন, আবেগের প্রকাশ করেছেন নানাভাবে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের লাইন এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। বিকেল চারটায় পূর্ব নির্ধারিত সময়ে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে ফটক বন্ধ করার চেষ্টা করলে ভক্তদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করার খবর এসেছে বলেও জানায় বিবিসি। আহত মানুষের রক্তাক্ত ছবি এসেছে গণমাধ্যমে।