নগরে আধুনিক স্লটার হাউজ তথা কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও ডিজাইন প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। নিয়োগ পাওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ডিজাইন করার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে। সবমিলিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হতে পারে। কসাইখানাটি নির্মিত হলে নগরীতে পশু জবাই ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এই স্লটার হাউজ।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৮ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ (দি লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট-এলডিডিপি) শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গৃহীত প্রকল্পটির আওতায় নগরের চান্দগাঁওয়ে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত। এজন্য বরাদ্দ আছে ৮৮ কোটি টাকা। ‘এলডিডিপি’ প্রকল্পটির আওতায় দেশের ৬১ জেলায় প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদশীলতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন, উৎপাদক-গ্রুপ প্রতিষ্ঠা, জলবায়ুর স্মার্ট-উৎপাদন কৌশলের উন্নয়ন এবং মার্কেট-লিংকেজ এবং ভ্যালুচেইনের উন্নয়নে কাজ চলছে। কিন্তু নগরে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের ভৌত কোন কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবদুর রহিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডিজাইন ও সুপারভিশন করার জন্য ফার্ম নিয়োগ করা হবে এবং সেটি প্রক্রিয়াধীন। এরপর ডিজাইন হলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাব।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে কসাইখানা নির্মাণ প্রকল্প অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির জায়গাও চূড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি সেটা দেখে গেছেন। এখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তাদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর দরপত্র আহবান করা হবে। আমরাও চাই প্রকল্পটি হয়ে যাক। কারণ বিশ্বব্যাংকের টাকা ফেরত গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুন কসাইখানা নির্মাণ বিষয়ে নগর ভবনে তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে বৈঠক করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। ওই বৈঠকে মেয়র জায়গা প্রদানে সম্মতি দেন। সর্বশেষ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর চান্দগাঁওয়ে চসিকের ৮৮ শতক জায়গায় এ কসাইখানা নির্মাণে দেয়া হয়। কসাইখানা নির্মাণ শেষে তা পরিচালনার জন্য চসিকের কাছেই তা হস্তান্তর করা হবে।
স্লটার হাউজটির উপকারিতা : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক কসাইখানাটিকে ঘিরে নগরীতে গবাদী পশু সংক্রান্ত একটি বড় মাপের একটি ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা হবে। এতে থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসোলেশন, স্মার্ট স্টকিং স্পেস সুবিধা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, রক্ত ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শৃঙ্খলা। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ৫ তলা বিশিষ্ট ভবন এবং জবাই এরিয়া করা হবে। পশুর নাড়িভূড়িসহ শিং ফেলে না দিয়ে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা থাকবে এই কসাইখানার আওতায়। এ কসাইখানায় পশু জবাই করার আগে একজন পশু চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবেন জবাইয়ের জন্য আনা পশুর। জবাইয়ের পর সেই মাংসও পরীক্ষা করা হবে। পশুর রক্তকে পোলট্রি ফিডে রূপান্তর করা হবে। পশুর অন্যান্য বর্জ্যগুলোও রিসাইক্লিং করা হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেখানে-সেখানে পশু জবাই বন্ধ হলে পরিবেশও ঠিক থাকবে। রোগ-বালাই আছে এমন গরু জবাই করা বন্ধ হবে। যেখানে মাংশ বিক্রি করা হবে সেখানে পৌঁছে দেয়ার জন্য কুল-ভ্যান ক্রয় করা হবে। এই ভ্যানে করেই মাংসগুলো পৌঁছে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারিভাবে নির্মিত সর্বোচ্চ মানের আধুনিক কোনো কসাইখানা নেই। তবে পাবনায় বেসরকারিভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশে গড়ে উঠা একটি আধুনিক কসাইখানা রয়েছে। ওই হিসেবে চট্টগ্রামের কসাইখানাটি হবে দেশের প্রথম আধুনিক ‘স্লটার হাউজ।’