র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার মনির হোসেন ওরফে ‘গোল্ডেন মনির’কে মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। শনিবার গ্রেপ্তারের পর এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা তিনটি করে র্যাব। গতকাল রোববার তাকে পাঠানো হয় ঢাকার আদালতে। পুলিশের আবেদনে তিন মামলায় মনিরকে মোট ১৮ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের দুই বিচারক।
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিক অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিন এবং মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান মাদক মামলায় চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে মনিরকে মোট ১১ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে পুলিশ। অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার রিমান্ড একযোগে চলবে বলে তা ৭ দিনের হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু। খবর বিডিনিউজের।
আদালতে রিমান্ড বাতিল চেয়ে মনিরের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের কোনো উপাদান নেই মামলায়। তাছাড়া স্বর্ণালঙ্কার যা উদ্ধার হওয়ার কথা, তার সবই উদ্ধার করা হয়েছে। সে কারণে তাকে অহেতুক রিমান্ডে নেওয়ার দরকার নেই। মাদক মামলায়ও একই রকম বক্তব্য রাখেন তিনি। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মনির কোনো কথা বলেননি।
২০০ প্লট যাচাই করে ব্যবস্থা : বাড্ডার গোল্ডেন মনিরের নামে থাকা ২০০ প্লটের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে ব্যবস্থা নেবে সরকার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর আলম গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে।
ঢাকার মেরুল বাড্ডায় মনিরের বাসায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালায় র্যাব-৩। ছয়তলা ওই বাড়িতে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ১০টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা, চার লিটার মদ, ৮ কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল এবং কয়েক রাউন্ড গুলি পাওয়ার কথা জানানা হয় অভিযান শেষে।
‘গোল্ডেন মনির’ নামে পরিচিত এই ব্যক্তি সোনা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বলেছে, তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ী নন। আর র্যাব বলেছে, ব্যবসা নয়, কার্যত সোনা চোরাচালানই ছিল মনিরের কারবার; পরে তিনি জড়িত হন জমির ব্যবসায়।
গামছা বিক্রেতা থেকে জমির ব্যবসার ‘মাফিয়া’ হয়ে ওঠা মনিরের বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার বিষয়টিও ওই অভিযানের পর সামনে আসছে। বাড্ডা, নিকেতন, কেরানীগঞ্জ, উত্তরা, নিকুঞ্জে দুইশর বেশি প্লটের নথি পাওয়া গেছে মনিরের বাসায়। সব মিলিয়ে তার ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা। রাজউকের সিল নকল করে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে একটি এবং দুদকের একটা মামলা রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, এগুলো আমরা তদন্ত করব। তদন্তে যারা যারা শনাক্ত হবে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আদালতে যে মামলা আছে তা চলবেই।
মনিরের ২০০ প্লটের মালিক হওয়ার পেছনে রাজউকের কারো সহযোগিতা ছিল কিনা-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ধারণা এটা এক দিনের প্রক্রিয়া নয়, এটা দীর্ঘ দিনের প্রক্রিয়া। আমরা এত দিনে উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, মনিরের দুর্নীতির বিষয়টি প্রথম উদঘাটন হয় গত বছর, তখনই সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা চলমান থাকবে যতক্ষণ না সর্বশেষ বিষয়টি উদঘাটিত হচ্ছে।
মনিরের প্লটগুলো বাতিল করা হবে কিনা-এই প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো প্রকার ইয়ে (অনিয়ম-দুর্নীতি) থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই বাতিল করব। অনিয়ম রোধে রাউজকে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে।