মাত্র পাঁচ মিনিট বাঁচল তিন প্রাণ

চমেক হাসপাতালে মরা গাছ ভেঙে পড়ল গাড়ির উপর

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

মাত্র পাঁচ মিনিটের হেরফেরে বেঁচে গেছে এক শিশুসহ তিনজনের জীবন। ভাগ্যক্রমে ঘটেনি বড় অঘটন। তবে দুমড়ে মুচড়ে গেছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার একটি গাড়ি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গতকাল শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। জীবন বেঁচে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন গাড়ির মালিক ডা. মঈন। নিজের প্রিয় গাড়িটি দুমড়ে যাওয়ার মাঝেও সান্ত্বনা খুঁজছেন তিনি।
অবশ্য হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি ‘মরা’ গাছ থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সময়মতো গাছের মরা অংশটি কেটে নেওয়া হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দীন গতকাল দুপুরে সানসাইন গ্রামার স্কুলের শিক্ষিকা স্ত্রী রোকসানা পারভেজ আকতারকে নিয়ে এক মাস পাঁচ দিন বয়সী কন্যা আলিমা ইলহামকে বিজিসি টিকা দেওয়ার জন্য চমেক হাসপাতালে যান। নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। নিশান এক্স ট্রেইল ব্রান্ডের জিপটি (চট্টমেট্রো-ঘ-১১-৩১১৪) হাসপাতালের পার্কিং এরিয়ায় রেখে স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালের দোতলায় টিকা দিতে যান। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখেন, তার গাড়ির উপর বিশাল একটি গাছ পড়ে আছে। দুমড়ে মুচড়ে গেছে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে কেনা শখের গাড়িটি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, গাড়ি পার্কিং করে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গাছটি ভেঙে পড়ে গাড়ির উপর। গাড়ির ফ্রন্ট সিটসহ সামনের অংশের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচ মিনিট আগে যদি গাছটি ভেঙে পড়ত তাহলে তাদের কী অবস্থা হত তা ভেবেই শিউরে উঠলেন তিনি। গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্ত্রী-সন্তান ও নিজে বেঁচে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
নগরীর দক্ষিণ খুলশী এক নম্বর সড়কের বাসিন্দা ডা. মঈন আজাদীকে বলেন, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানের বেঁচে থাকাটাই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। তবে আমার বা আমাদের মতো অন্য কারো কিছু হয়ে গেলে কোনো সান্ত্বনা থাকত?
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুঁইয়া বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন গাড়ি পার্কিং এলাকায় একটি শুকনো গাছ ভেঙে পড়ে। এতে কেউ আহত হয়নি। তবে দুটি সিএনজি টেক্সি ও একটি প্রাইভেট জিপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি। গাছটি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পার্কিং এলাকায় প্রতিদিন চিকিৎসকদের গাড়িসহ শতাধিক গাড়ি রাখা হয়। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভসহ বিভিন্ন মানুষের প্রচুর মোটর সাইকেলও থাকে। গাড়ির চালকসহ পথচারীরা পার্কিংয়ের ভেতরের রাস্তা ব্যবহার করেন। অনেকে গাছের ছায়ায় বসে আড্ডা দেন। গতকাল গাছটি যেভাবে ভেঙে পড়েছে তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রেইনট্রি প্রজাতির বড় এই গাছটি প্রায় দুই বছর আগে মরে যায়। মরা গাছটিতে দুটি বিশাল কাণ্ড রয়েছে। এক পাশের কাণ্ডের ভেতরে পচে পুরো অংশটি ভেঙে পড়ে। মরা গাছটি কেটে ফেললে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, হাসপাতালে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় এসেছিলেন। আমরা প্রোগ্রাম নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। পরে বিষয়টি শুনে হাসপাতালের পরিচালক মহোদয় ঘটনাস্থলে দেখতে যান। ব্যক্তিগত গাড়িটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে গাছটির ডাল ভেঙে পড়েছে, সেটি বেশ কিছুদিন আগে শুকিয়ে যায় বলে আমরা শুনেছি। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন গাছপালা আর আছে কিনা তা সংশ্লিষ্টদের দেখার জন্য বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পার্কিং এরিয়ার গাছের ঝুঁকিপূর্ণ ঢালপালা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাজ ২০ শতাংশ পরিশোধ পুরো বিল
পরবর্তী নিবন্ধযুক্ত হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জও