চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত মাসে শুরু হয় ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) কার্যক্রম। নতুন এই পদ্ধতিতে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) ভোগান্তি লাঘব হবে বলা হলেও কার্যত অবস্থা ঠিক আগের মতোই আছে। বিডাররা বলছেন, সম্প্রতি ই-অকশন শুরু হওয়ার পর আমরা মনে করেছিলাম এবার হয়তো সব প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হবে। কিন্তু দেখা গেছে, শুধুমাত্র টেন্ডার ড্রপিংটা (জমা দেয়া) অনলাইনে হচ্ছে। বাকিসব প্রক্রিয়া ঘুরেফিরে আগের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হচ্ছে। তাই এটি কেবল নামেই ই-অকশন।
কাস্টমসের স্টেকহোল্ডাররা জানান, গত বছরের জুলাইয়ে ই-অকশন কার্যক্রম উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দেয়ায় সেটি পিছিয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় কাস্টমস কর্তারা বলছেন, ই-অকশন শুরু হলে পণ্যের তালিকা ও দরপত্রের সবকিছুই অনলাইনে দেখা যাবে। নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা কাস্টমস অফিসে না এসেই তখন আবেদন করতে পারবেন। এরপর অনলাইনের মাধ্যমেই নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দরদাতার নামে পণ্য বরাদ্দ দেয়া হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাগজপত্রের ঝামেলাও বেশি। নিলামে অংশগ্রহণকারীকে কাস্টমসের নিলাম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এতে তাদের খুব বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। পুরো নিলাম প্রক্রিয়া অনলাইন হয়ে গেলে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিয়মিত বিডার এবং ‘আর রেজা’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জহিরুল ইসলাম নাঈম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ই-অকশনের যে সুফলের কথা চিন্তা করেছিলাম তার কিছু্ই আমরা পাচ্ছি না। ই-অকশনে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র দরপত্রটাই আমরা অনলাইনে জমা দিয়েছি। গত ২৭ অক্টোবর দুপুর থেকে ২৮ অক্টোবর বিকাল পাঁচটার মধ্যে অনলাইনে বিডাররা দরপত্র জমা করেন। নিলামের স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী ১২ কার্যদিবসের মধ্যে পণ্যের অনুমোদন দিতে হয়। যদিও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আমরা এটি খুব সময় অনুমোদন পেয়েছি। তবে আশা করেছিলাম, ই-অকশনের ক্ষেত্রে সেটি হবে না। এখন শুনলাম এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রসূনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেটির ক্ষেত্রেও আমদানিকারক মামলা করে দিয়েছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্রের সাথে আমরা ব্যাংক পে-অর্ডার জমা করে দিতাম, যারা লোয়েস্ট বিডার তাদের পে-অর্ডার ৪ থেকে ৬ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত পেতাম। কিন্তু ই-অকশনের ক্ষেত্রে নিয়ম করা হয়েছে, দরপত্র জমা দেয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে পে-অর্ডার জমা দিতে হবে। এতে বিডাররা সময়ক্ষেপন হবে এটি স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ই-অকশনে যারা সর্বোচ্চ বিড করবেন, তাদের ক্ষেত্রেই কেবল ব্যাংক পে অর্ডার জমা দিতে হবে এটি ৫ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
নিয়ম রাখতে পারে। এখন পর্যন্ত ই-অকশনের কোনো সুফল পাচ্ছি না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. ফয়সাল বিন রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ই-অকশন কার্যক্রম মাত্র শুরু হয়েছে। এবার ১৬টি লটের মধ্যে ৮টি দরপত্র জমা পড়ে। এই ৮টির মধ্যে আবার ৪টি পণ্যের ৬০ শতাংশের বেশি দর পাওয়া যায়। তাই ৪টি পণ্যের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, নিলাম কমিটি বসে অনুমোদন দেবেন এটি বলা আছে। আমরা কখনো বলিনি, ই-অকশনে দরপত্র জমা দেয়ার পর অনুমোদন দেয়া হবে। তবে ব্যাংক পে-অর্ডারের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বিডাররাও বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। আসলে ই-অকশনের পরদিন আমাদের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বড় একটি নিলাম সম্পন্ন হয়। তাই অনেক সময় ১২ কার্যদিবসের মধ্যে অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয় না। তবে আমরা চেষ্টা করি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে পণ্যের অনুমোদন দেয়া যায়।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ই-অকশন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাদিক বলেন, কাস্টম হাউসের কার্যক্রম ডিজিটাইলেজশন করার প্রতি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এর অংশ হিসেবে আমরা অনলাইন নিলাম শুরু করছি। অনলাইন নিলামে একজন বিডার ঘরে বসে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এটি একটি নতুন দিগন্ত। এদিকে একইদিন ই-অকশনের মাধ্যমে ৬ লটে ফেব্রিঙ, রসূন, সোডা অ্যাশ, আয়রন পাইপ ও স্ক্র্যাপ জাতীয় পণ্য নিলামে তোলা হয়। নিলামে ১৬টি লটের মধ্যে ৮টিতে দরপত্র জমা পড়ে। ৮টিতে মোট ৩৮ দরপত্র জমা পড়ে।