আনোয়ার হোসেন – বাংলা চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তি অভিনেতা। ষাটের দশকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ নবাব সিরাজউদ্দৌলা’য় নাম ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে রাতারাতি তিনি নবাব বনে যান। ‘বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন সম্রাট’ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতি। প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে কয়েকশ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন অসাধারণ গুণি এই শিল্পী।
আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার মুরুলিয়ায়। ১৯৫১ সালে জামালপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। অভিনয়ের সূচনা ছাত্রজীবনে। কলেজে পড়াকালীন মঞ্চ নাটক করতেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় স্থায়ী হন এবং ঢাকা বেতারে অভিনয় শিল্পী হিসেবে যুক্ত হন।
চলচ্চিত্রে আনোয়ার হোসেনের পথচলার শুরু ‘সূর্যসন্তান’ ছবির মাধ্যমে। এরপর একে একে প্রচুর অভিনয় করেছেন। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘তোমার আমার’ ছবিতে তাঁর চরিত্র ছিল খলনায়কের। তবে অধিকাংশ চরিত্রেই আনোয়ার হোসেন কখনো স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী, সৎ বিবেকবান প্রেমিক, মমতাময়ী ভাই, স্নেয়ময়ী পিতা প্রভৃতি ন্যায়নিষ্ঠ আদর্শে নিজেকে প্রতিভাত করেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: ‘সূর্যস্নান’, ‘জোয়ার এলো’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘নাচঘর’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘সুতরাং’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘পালঙ্ক’, ‘লাঠিয়াল’ প্রভৃতি। বিভিন্নমুখী চরিত্রে আনোয়ার হোসেনের অনবদ্য অভিনয় এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ। ‘পালঙ্ক’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় আনোয়ার হোসেনকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক, চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা এবং তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন আনোয়ার হোসেন। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাকিস্তান থেকে তাঁকে দেওয়া হয় নিগার পুরস্কার। চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন বাংলার মুকুটহীন নবাব আনোয়ার হোসেন।