পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার দুই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আইন অনুযায়ী পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া প্রকল্পের কাজ করা বেআইনি। অন্যদিকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ বলছে, আবেদন করে বছরের পর বছর পার হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র মিলছে না।
সূত্রে জানা গেছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬শ কোটি টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা, খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা বাড়ানো, মাটি উত্তোলন, প্রতিরোধ দেওয়াল দেওয়া, ড্রেন সংস্কার ও নতুন ড্রেন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। এখন মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে। পুরো প্রকল্পটির অর্ধেক কাজ শেষ হলেও এখনো পরিবেশ ছাড়পত্র পায়নি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অন্যদিকে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ প্রকল্পে র্যাম্প ও লুপসহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫৪ ফুট। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং এবং সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত চার ধাপে কাজ বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। বর্তমানে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সমুদ্র সৈকত ও সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, নগরীতে দুই মেগা প্রকল্পের কাজ অর্ধেক শেষ হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এখনো ছাড়পত্র মেলেনি। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নকালে ধুলোবালির দূষণ বেড়েছে প্রকল্প এলাকাগুলোতে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য সিডিএ পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। এখনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ছাড়পত্র অনুমোদন প্রক্রিয়াটি ঢাকা থেকে হয়। তবে ছাড়পত্র পাওয়ার আগে তারা দুই প্রকল্পে ৩০-৪০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প সেহেতু কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তবে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ পেলে আমরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করব। যদি নমুনায় পরিবেশ আইন ভঙ্গ হয়, তাহলে বাস্তবায়নকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিল শামস আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলছে। পরিবেশ ছাড়পত্র না পাওয়ায় আমরা এখনো প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করতে পারছি না। কারণ জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের চাওয়া আবশ্যিক ডকুমেন্টের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্রও রয়েছে। আমরা এখন কাজ করছি সরকারি খাসের জায়গাগুলোতে। প্রকল্পের অধীনে নালা সম্প্রসারণ, রাস্তা তৈরির জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ ছাড়পত্রের কারণে কাজটি বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে প্রকল্পের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতো না। তারপরও এই প্রকল্পগুলোতে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কোনো কারণে হয়তো ছাড়পত্র দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিলম্ব হচ্ছে।