‘পথের পাঁচালী’- বাংলা সাহিত্যের এক মাইল ফলক। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী এ উপন্যাস পড়েননি বা কাহিনী অজানা এমন বাঙালি পাঠক পাওয়া সত্যিই মুশকিল। দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এক পরিবারে ছিল প্রাণচঞ্চল দুটি ভাই- বোন। দুর্গা আর অপু। শত অভাবের মাঝেও ভাই বোনের খুনসুটি, ভালোবাসা পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যায়। মৃত্যুর পূর্বে বোন দুর্গার আবদার ছিল ছোট ভাই অপুর কাছে ‘রেলগাড়ি দেখা’। তাও পূরণ হলো না। তাইতো প্রথম রেলগাড়িতে চড়ে দিদির জন্য ছোট্ট অপুর শিশুমনের যে হাহাকার তা আজও পাঠকচিত্তকে নাড়া দেয়। বিভূতিবাবু, যুগ পাল্টেছে। কিন্ত চলমান সময়ের স্রোতে দুর্গারা আজও সমাজ- সংসারে আসে বিভিন্নরূপে। কখনো মা,কখনো বোন,কখনো স্ত্রী, কখনো ভালোবাসার দুর্গা হয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকের দুর্গারাও বাঁচতে পারে না। সেদিন দরিদ্র ঘরে জন্মে ভাই অপু ছিল অসহায়। আর আজ তথাকথিত আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা পুরোটাই অসহায়! আজো দুর্গাদের করুণ আর্তি চারিদিকে! অসুরেরা আজ প্রবলভাবে জাগ্রত হয়ে উঠেছে। বীভৎসতার চরম সীমা লঙ্ঘন করে প্রাণ দিতে হচ্ছে মাতৃরূপী, স্ত্রীরূপী, বোনরূপী সর্বোপরি ভালবাসার দুর্গাকে! বিভূতিবাবু, আপনার দুর্গা ছিল চরম দারিদ্র্যতার শিকার। আর আজকের দুর্গারা অসুস্থ ও মানসিক বিকারগ্রস্ত, ঘৃণ্য সমাজ ব্যবস্থার শিকার। দুর্গারা তখনো অসহায় ছিল এখনো অসহায় শুধু কারণটা বদলেছে। বিভূতিবাবু, দুর্গাদের মৃত্যুতেই কী সকল উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটবে? আমরা কী দুর্গাদের বাঁচিয়ে রাখতে কিংবা সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে পারি না!