সাফল্য সবসময় আরও বড় সাফল্য ডেকে নিয়ে আসে। তেমনি চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে পুরো দেশের আরও উন্নয়ন ডেকে আনবে। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়ন কোনো অঞ্চলের উন্নয়ন নয়, এটা আঞ্চলিক কোনো দাবিও নয়, বলা যেতে পারে এটি জাতীয় দাবি। চট্টগ্রামকে ঘিরে যে সব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম এক অনন্য আধুনিক নগরীর পূর্ণতা লাভ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা গেলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। যা সরকারের ভিশন ২০২১ কে পূর্ণতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
আমরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেননা তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কোনো আপস নয়। তাঁর এ কথাটি খুবই আশাব্যঞ্জক। উন্নয়ন কতটুকু হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও মন্ত্রীর দ্ব্যর্থবোধক বক্তব্য আমাদের আন্দোলিত করে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ইকোনমিক হাব অব বাংলাদেশ (বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র)। বিশ্ব পরিস্থিতিতে মূল্যায়ন করতে গেলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব কতটুকু তা আমরা বুঝতে পারি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব উপলব্ধি করি। প্রকৃতি থেকে আমরা এটা পেয়েছি। এখন সেটাকে যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে হবে। এটাকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে গড গিফটেড অপরচুনিটি রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম দৃষ্টিনন্দন শহর হবে। আউটার রিং রোড, কঙবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করতে পারলে হাজার হাজার পাঁচ তারকা হোটেল হবে। এজন্য রকেট সায়েন্সের দরকার হবে না। শুধু চট্টগ্রাম পর্যটন খাত দিয়ে পুরো দেশকে এগিয়ে নেবে। তবে অবকাঠামো যেন আগামী দিনের দুর্ভাগ্য ডেকে না আনে। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন একজন ব্যক্তি দুই হাজার ডলারের বেশি আয় করার ক্ষমতা রাখেন। চট্টগ্রাম একটি উর্বর ভূমি। আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা সেটা পেয়েছি। এখন সেটাকে যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের নদীগুলোতে যদি অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয় তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখেন। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য পথনকশা তৈরি করেছেন। এই নকশার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় এসেছে। তাই শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন সীমাবদ্ধ রাখা হবে না। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সেই রূপসা থেকে পাথুরিয়া-যেখানেই হোক না কেন, মানুষকে তার নিজের অধিকার দেয়া হবে।
দীর্ঘ বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রামে উন্নয়নমূলক বড় কিছু কাজ চলমান কিংবা পরিকল্পনায় থাকলেও বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ খাতের উন্নয়ন-সম্প্রসারণ হয়নি সমভাবে। তাই যে গতিতে দেশের চট্টগ্রাম নগরীর এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে উন্নয়ন বঞ্চনায় খেই হারিয়ে ফেলা চট্টগ্রাম এখন কার্যত টানাপোড়নে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগুচ্ছে। সেই জায়গায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বক্তব্য অনুপ্রাণিত করবে সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। যানজট, জলজটসহ চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যার সমাধান করা হলে তার সুফল গোটা বাংলাদেশ পাবে। কারণ এ নগরীর মাধ্যমে দেশের মোট রফতানির ৮০ এবং আমদানির প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনা সম্ভব। চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি শুল্ক আসে। এর একটি অংশ নগরীর উন্নয়নে ব্যয় করার প্রস্তাব অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এর সুফল ভোগ করবে পুরো দেশবাসী। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবার দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এতে দেশের অর্থনীতির বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাহলেই উপকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবে না চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।